স্বাস্থ্য: চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন আমাদের চোখের সামনে অ্যাকোয়াল হিউমার বলে একটা তরল পদার্থ সব সময় সঞ্চালিত হচ্ছে। চোখের ভেতরে একটা নির্দিষ্ট চাপ রক্ষা করতে যতটুকু তরল পদার্থ চোখের ভেতর সৃষ্টি হচ্ছে, ততটুকু চোখের ভেতর থেকে অতি ক্ষুদ্র নির্গম কোণ বা পথ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু চোখের ভেতরটা একটা বদ্ধ জায়গা, যদি কোনো কারণে অ্যাকোয়াল হিউমারের নির্গম কোণ বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যেতে পারে না।
এতে তরলের চাপ চোখের ভেতর বৃদ্ধি পায় এবং সেই চাপ অপ্টিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এভাবেই গ্লুকোমা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। যাদের হয় : যে কোনো বয়সে এটি হতে পারে। জন্মের সময় বেশ বড় চোখ এবং উচ্চ চক্ষুচাপ নিয়ে জন্মালে একে বলে জন্মগত উচ্চ চক্ষুচাপ। তরুণ বয়সেও এ রোগ হতে পারে। বেশিরভাগ গ্লুকোমা রোগ ৪০ বছরের পর হয়ে থাকে। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে যাদের এ রোগ আছে, যারা মাইনাস পাওয়ার চশমা পরেন, যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
উপসর্গ : উপসর্গ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-হঠাৎ করে একচোখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এর সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব। আবার সব সময় চোখ ও মাথায় হালকা ব্যথা (বিশেষ করে কম আলোয়) এবং ক্রমে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। আবার ব্যথা ছাড়াই উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়া। মাঝে মধ্যে দৃষ্টি সীমানার যে কোনো এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ছানি পেকে চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি।
প্রতিরোধের উপায় : পারিবারিকভাবে গ্লুকোমা রোগের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখ পরীক্ষা করতে হবে। অল্প আলোয় কারো চোখ ও মাথাব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। চোখে ছানি পড়লে তা পেকে যাওয়ার আগেই অপারেশন করিয়ে নিতে হবে। চোখে প্রদাহ হলে তা থেকে গ্লুকোমা হওয়ার আগে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
চোখে আঘাতের পর দেরি না করে চিকিৎসা নিন। স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি যারা নেন, তারা তিন-চার মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করাবেন। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যেমন-পরিমিত খাদ্য-অভ্যাস, লবণ জাতীয় খাবার বর্জন তথা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।