স্বদেশ ডেস্ক: আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য দিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ।
শনিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে বিত্তশালীরা বিনিয়োগ করবেন। না হলে টাকা পাচার হয়ে যাবে। এসব টাকা বিনিয়োগ হলে, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সমৃদ্ধি সোপানের সিঁড়ি বেয়ে আরো উপরে উঠতে চাই। বাজেটে গরীব-ধনীদের বৈষ্যম যাতে হ্রাস পায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এডিপিতে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বন্দী, ঠিকাদারদের হাতে বন্দী থাকায় প্রকল্পে খরচ বাড়ছে। এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই অর্থবছরের সময় পরিবর্তন করা উচিত, কারণ বর্ষা মৌসুমে অর্থবছর শুরু হয়। সে কথা মাথায় রেখে প্রয়োজন অর্থ বছর শীতকালে শুরু হলে উন্নয়ন আরো বাড়বে।’
বিরোধী দলীয় এই নেতা বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই। বেসরকারি খাত ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। অথচ বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
ভ্যাট আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন যে ভ্যাট আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে জটিলতা দেখা দেবে। ফলে রাজস্ব আদায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে তিনি বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার প্রস্তাব করেন।’
স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষুধ ও সরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়লে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। তাই স্বাস্থ্য খাতে বেশি নজর দিতে হবে। এখাতে দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে রওশন এরশাদ বলেন, ‘ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের প্রণোদনা দিতে হবে। বড় বড় কোম্পানীগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে হলে উদ্যোগ নিতে হবে। অনলাইনে কেনা-বেচায় ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রয়োগ করা হলে অনেক তরুণ-তরুণী জড়িত রয়েছে, তারা নিরুৎসায়িত হবে। এ খাত ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
তিনি বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান না হলে বিনিয়োগ হবে না, বৈষম্য কমবে না। বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে।
নারীদের জন্য পৃথক ব্যাংক সৃষ্টির দাবী জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এই ব্যাংক থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হবে, অন্যদের স্বাবলম্বী করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধান বেশি হল কিন্তু কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কৃষক শস্য ফলাবে, তার প্রয়োজনীয় টাকা পাবে। কিন্তু তাদের মাথায় হাত। আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিল। তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যেও কৃষকদের শতভাগ ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষককে কেনো ধান ক্ষেতে আগুন দিতে হল। আমি কৃষিমন্ত্রীর কাছে এর জবাব চাই।’
বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে রওশন বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান অনেক বেশি অসুস্থ। আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছেন। তবে, তিনি অনেক দুর্বল। আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া চাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন।’