স্বদেশ ডেস্ক: নেওয়াজ রিফাত শরীফকে খুন করা হয়েছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে। গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন এমন তথ্য জানালেও কী সেই ব্যক্তিগত কারণ তা ব্যাখ্যা করেননি। বরগুনায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুনের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ২ জনসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই আসামি চন্দন ও হাসানের ৭ দিন করে এবং অপর আসামি নাজমুল হাসানের তিন দিনের রিমান্ড গতকাল মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে রিফাত শরীফ খুনের পর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তায় নিহত রিফাতদের বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে।
রিফাত খুনে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে যে চার যুবককে পুলিশ আটক করেছিল, সম্পৃক্ততা না থাকায় এবং ভিডিও ফুটেজে দেখা খুনিদের সঙ্গে চেহারার কোনো সাদৃশ্য না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি মো. নুরুল।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি মারুফ জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট; চলছে চিরুনি অভিযান। বাংলাদেশের প্রতিটি সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না। এ ঘটনায় সর্বশেষ ১৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। রিফাত হত্যার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য ঘটনার পরদিন অর্থাৎ গত বৃহষ্পতিবার সীমান্তে সতর্কতা জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্র্ট।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, এ খুনের ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি, র্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কাজ করছে। আশা করছি, সব আসামিকে শিগগিরিই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আসামিদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে।
এদিকে রিফাত শরীফের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করা দুর্ধর্ষ নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীসহ অস্ত্রধারী খুনিরা ৩ দিনেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে হতাশা ও নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিদের পরিবারও এ কারণে হতাশা ব্যক্ত করেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রমতে, প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও রিশান ফরাজীকে তাদের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। তবে এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ।
দেশব্যাপী আলোচিত নৃসংস এ হত্যার ঘটনায় নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরিফ গত বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে। রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও চন্দন নামে এক যুবককে যথাক্রমে মামলার দুই, তিন ও চার নম্বর আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন-মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন্দ, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান, মো. হাসান, রিফাত, অলি ও টিকটিক হৃদয়।