স্বদেশ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ, ডাকসু ও টিএসসিতে তাদের উপর হামলার বিচার, ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে শূণ্যপদে যোগ্যদের পদায়নসহ চারদফা দাবিতে এক মাস তিন দিনের অবস্থানের পর আজ শুক্রবার বিকেল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন পদবঞ্চিতরা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের মুখপাত্র সাবেক প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে এলেও অবস্থানের এতোদিনে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতসহ কোনো দাবিই পূরণ হয়নি পদবঞ্চিতদের।
শুক্রবার বিকেলে দেখা যায়, ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, বিগত সময়গুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রবলভাবে জড়িত ছিল, তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ দিয়ে মূল্যায়ন না করে নিষ্ক্রীয়, চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের উল্লেখিত অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী, অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত বা বিতাড়িতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদ দেয়া হয়েছে। আমরা চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।
সাবেক উপ-ক্রীড়া সম্পাদক এনামুল হক তানান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো এতো বড় গণতান্ত্রিক একটি ছাত্র সংগঠনের পদ দেয়া হয়েছে কোনো ধরণের বাছ-বিচার করা ছাড়াই।
বিতর্কিত কমিটি হঠিত হওয়ার পর ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর, আমাদের তীর্থস্থান মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সমেলনের আয়োজন করেছিলাম। সেখানেও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নতুনভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের জখম করা হয়েছে।
তিনি জানান, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আমাদের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতবৃন্দের সাথে দেখা করে ঘটনার সবিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ কামনাসহ এসব ঘটনার জড়িতদের বিচার ও কমিটি থেকে বির্তকীদের অপসারণা করে তদন্তের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়নের দাবি জানাই।
তারা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করতে বললে আমরা সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ চলে যাই। পরে আমাদের দাবির কোনোটিই পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা দাবি আদায়ের জন্য অনশনের মতো কঠিন পথ বেছে নিয়েছি।
সাবেক উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক কৃষ্ণ মজুমদার জানান, ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। যাতে পদ দেয়া হয়েছে ৩০১ জনকে। পদ পাওয়া ৩০১ জনের মধ্যে বড় একটি অংশ বিতর্কিত এবং যাদের গঠনতন্ত্র কিংবা নৈতিকভাবে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই।
মজুমদার বলেন, শুধুমাত্র নিজস্ব ব্যক্তিবিবেচনায় কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী একটি ছাত্রসংগঠনে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেখে ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে আমরা ব্যথিত, হৃদয় ভারাক্রান্ত। সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সুষ্ঠুতর নজির পৃথিবীতে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। কিন্তু প্রকাশ্যে দিবালোকে, অনিয়ম, গঠনতন্ত্রের চরম লংঘনের নজিরও ছাত্রলীগের ইতিহাসে তো নয়ই পৃথিবার কোথাও আছে কি-না তাও আমাদের জানা নেই।
সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, নবগঠিত ছাত্রলীগের অনিয়মের কমিটি নিয়ে আমরা বারংবার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই পদবঞ্চিতরা বিতর্কিত কমিটির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। কিন্তু আবেগের সেই মিছিলে হামলা চালিয়ে নারী নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়। আমরা চাই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে শূন্যপদে যোগ্যদের পদায়নসহ চার দফা দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।
অনশনকারীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। দাবি আদায় না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যেই জীবনের শেষ সময় পার করবো।
এর আগে ২৬ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কযের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। একই দিন তার প্রতিক্রিয়ায় মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের মারধরের শিকার হন ১২ জনের মতো নারীনেত্রীসহ পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
পরে ১৮ মে রাতে টিএসসিতে আবার হামলার শিকার হন তারা। ওই ঘটনার পর তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হামলার বিচারসহ কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে অনশন শুরু করে। পরদিন ১৯ মে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেন পদবঞ্চিতরা। এরপর ২০ মে মধুর ক্যান্টিনের ঘটনায় পাঁচজনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় পরে ১৯ জনকে বহিষ্কার করার কথা বলে ছাত্রলীগ। পরে সেই সংখ্যা কমিয়ে ১১ জনে আনা হয়। তবে সেই ১১ জনের পদ এখনো শূন্য করেনি সংগঠনটি।