শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‘কর্মকর্তার নেতৃত্বে কিশোর হত্যা’ বেআইনি পদক্ষেপ নেয়া হলো!

‘কর্মকর্তার নেতৃত্বে কিশোর হত্যা’ বেআইনি পদক্ষেপ নেয়া হলো!

সরকারের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্মমভাবে পিটিয়ে তিন কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। নারকীয় কাজটি করেছেন সংশোধনাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তারা সভা করে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ কাজ করেছেন। আইনের রক্ষক সংস্থাগুলোর আইনের প্রতি এভাবে চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তির আইনের প্রতি এমন বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শনের অসংখ্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। কিছু ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে এমন সব কাজ করছেনÑ তা বলার কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং সরকারকে সত্যিকার অর্থে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে অকার্যকর, দুর্বল ও নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়ার জন্য কেউ এমন কাজ করাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, কিশোরদের সংশোধনের জন্য দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা সামান্য একটি কারণকে ওদের ওপর বর্বর কায়দায় নির্মম নির্যাতন চালানোর জন্য ব্যবহার করেছেন। সংশোধন কেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা একসাথে বসে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেখানে আরো সিদ্ধান্ত হয়, কিশোররা জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত তাদের পেটানো হবে। বাস্তবে যখন তারা পেটাচ্ছিলেন তারা সে হুঁশ জ্ঞান রাখতে পারেননি। মারের চোটে তিনজন প্রাণ হারায়। বাকি ১৫ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনও কর্মকর্তারা অনুভব করেননি। সিভিল সার্জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান কিশোররা অজ্ঞান পড়ে আছে। তখন তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নেয়া হয়। তাহলে কারা এসব দায়িত্ববান ব্যক্তি কিশোরদের সংশোধনের গুরুদায়িত্ব দেয়া হলো তাদের।
একটি অন্যায় করে সেটিকে ধামাচাপা দেয়ার জোরালো অন্যায়প্রবণতা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্প্রতি বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে অনেকে নিজেদের অপরাধ আড়াল করে ফেলতে পারছেন। এই কর্মকর্তারাও কিশোর হত্যার জন্য তাদের মধ্যে মারামারির গল্প যথারীতি চালিয়ে দেন। পরে জানা গেল, একজন কর্মকর্তার সাথে বচসার পর সংশোধনাগারের কর্মকর্তা এমন বেআইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তুচ্ছ কারণে কিশোরদের ওপর এই প্রাণঘাতী হামলা চালানো হলো। বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একজন কিশোরের অপরাধপ্রবণ হওয়ার অনুকূল। সে জন্য সারা দেশে কিশোর অপরাধী থাকা স্বাভাবিক। টঙ্গী ও গাজীপুরে আরো দু’টি কিশোর সংশোধানাগার রয়েছে। টঙ্গী সংশোধনাগারে কিশোরদের প্রতি সঠিক আচরণ করা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সময় খবর বের হয়েছে। জানা যায়, বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না তাদের। একজন ভালো মানুষ হওয়ার স্বার্থে এই কিশোরদের প্রতি যথেষ্ট মানবিক আচরণ করা প্রয়োজন।
কর্মকর্তারা যশোরের ওই কিশোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদের সভায় কয়েকটি অভিযোগ আনেন। একটা হচ্ছে মাদক সেবন, অন্যটি হলো কারো কারো যৌন অনৈতিকতা। সংশোধনাগার তো সংশোধনের জন্যই। তাদের আচার-আচরণ যাতে শুধরে যায় সে জন্য কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। সেখানে যদি মাদক পৌঁছে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী। কিন্তু কিশোরদের বেধড়ক মারধরের জন্য এসবকে ব্যবহার করছেন কর্মকর্তারা।
অপরাধীদের সংশোধনের জন্যই কারাবাস। অথচ কারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই সব অপরাধ এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। কিন্তু কিশোরদের হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা পুরো কারাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবাচ্ছে। আমরা এ প্রসঙ্গে তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। প্রত্যেকটি সিস্টেমকে ভঙ্গুর করে দেয়ার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করা হচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। একে বিচ্ছিন্নভাবে অন্যান্য ঘটনার মতো পাশ কাটানো হলে আরো বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। প্রয়োজন এখনই যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877