রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন

আত্মসমর্পণের বদলে তারা আসেন অতিথি হয়ে

আত্মসমর্পণের বদলে তারা আসেন অতিথি হয়ে

স্বদেশ ডেস্ক:

কক্সবাজারের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মরণনেশা ইয়াবা বড়ির পাচার ঠেকাতে গত বছরের ৪ মে থেকে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধেও ধরাশায়ী হতে থাকে মাদককারবারিরা। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগেও যখন টেকনাফের ইয়াবা কারবারিদের থামানো যাচ্ছিল না, ঠিক তখনই পুলিশ প্রশাসন টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবাকারবারিদের আত্মসমর্পণ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীকালে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ ইয়াবাকারবারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের তৎকালীন আইজির উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেন।

কিন্তু আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তালিকাভুক্ত কয়েকজন ইয়াবাকারবারি আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে আসায় এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। আত্মসমর্পণ না করে তাদের অনুষ্ঠানস্থলের সামনের সারিতে বিশেষ মেহমানের আসনে বসতে দেখা যায়। এ নিয়ে উপস্থিত সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়।

জানা গেছে, সেদিন ইয়াবাকারবারির তালিকায় নাম থাকা টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জাফর আহমদ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সারিতে বসা ছিলেন। তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াও অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে ছিলেন। এ ছাড়া টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দীন, তার ভাই বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজউদ্দীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান লেদু। তারা কক্সবাজারের শীর্ষ ৭৩ ইয়াবাকারবারির তালিকাভুক্ত। এ ৫ জনের

মধ্যে পরবর্তীকালে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া এবং কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান লেদু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তারা এখন কারাগারে। বাকিরা গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছেন।

গত বছরের ২৫ জুলাই যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দেওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। তাকে গ্রেপ্তারের পর ইমিগ্রেশন পুলিশ ওইদিন জানিয়েছিল, ভারত যাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, অস্ত্র ও মাদকসহ চার মামলার পলাতক আসামি শাহজাহান মিয়া। তার বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বেনাপোল বন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

পরবর্তীকালে শাহজাহান মিয়াকে টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তার টেকনাফের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বসতঘরে জেনারেটরের পাশে বিশেষ কৌশলে বস্তা ভর্তি রাখা অবস্থায় ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, ৪টি দেশি অস্ত্র (এলজি) ও ২৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় পৃথক ২টি মামলা হয়। যে মামলায় শাহজাহানের বাবা সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদকেও আসামি করা হয়।

এদিকে তালিকাভুক্ত শীর্ষ কয়েকজন ইয়াবাকারবারি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসায় সেদিন দর্শক সারিতে বসা এক ব্যক্তি ক্ষোভের সঙ্গে আমাদের সময়ের প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করে বলেন, ‘দেশে আইন সবার জন্য সমান নয় কি? তালিকায় নাম থাকা কেউ আত্মসমর্পণ করবে আবার গডফাদার হওয়া সত্ত্বেও অনেকে আত্মসমর্পণ না করে অনুষ্ঠানে বীরদর্পে উপস্থিত হবে এটা বেমানান।’

এ নিয়ে অনেকেই পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কোনোভাবে আশা করা যায় না। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। পুরো অনুষ্ঠানের সুন্দর আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারিদের অতিথি হয়ে আসার ঘটনায় গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের সময়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877