পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৩৭ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশ দলের বাইরে পয়েন্ট টেবিল দেখে সমর্থন দিতে হচ্ছে সমর্থকদের। যেমন ধরুন আজ নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচে বেশির ভাগ সমর্থকই কিউইদের পক্ষে। কেন উইলিয়ামসনের দল টেবিলের দুইয়ে (১১ পয়েন্ট), এ ম্যাচ ছাড়াও হাতে রয়েছে আরও দুটি ম্যাচ। এর মধ্যে অন্তত এক ম্যাচ জিতলেই সেমিতে উঠবে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এই তিন ম্যাচেও নিউজিল্যান্ড যদি হারে আর বাংলাদেশ যদি নিজেদের বাকি দুই ম্যাচ জেতে তবুও রানরেটে দুই দলের মধ্যে বড় ব্যবধানের পার্থক্য থাকার কথা। বাংলাদেশের জন্য তাই নিউজিল্যান্ডকে ধরা অনেক কঠিন। এদিকে পাকিস্তান আজ জিতলে সেমিতে ওঠার দৌড়ে মাশরাফিদের প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়বে। বাংলাদেশের সমর্থকেরা তাই আজ নিউজিল্যান্ডকে সমর্থন দিলেও আগে ব্যাট করতে নেমে দলটি কিন্তু ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল!
এজবাস্টনে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে। মাথার ওপরেও ভর করেছিল কালো মেঘ। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এর মধ্যে টস জিতে কেন আগে ব্যাটিং করলেন, সে প্রশ্ন থাকবে। অবশ্য খেসারতও দিতে হয়েছে ভালোই। টপ অর্ডারের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন দলীয় সংগ্রহ ১০০ রানের কোটা ছোঁয়ার আগেই। এখান থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়িয়ে পুরো ৫০ ওভারই খেলতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড ; সংগ্রহটাও হয়েছে লড়াই করার মতো—৬ উইকেটে ২৩৭।
২০০ রান তোলার আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ভোগা নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ের সংগ্রহটুকু এনে দিয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও জিমি নিশাম। ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ বলে ১৩২ রানের জুটি গড়েন দুজন। গ্র্যান্ডহোম ৬৪ রান করে ফিরলেও নিশাম খেলেছেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। সেঞ্চুরির সুবাস ছড়িয়ে অপরাজিত ছিলেন ৯৭ রানে।
এজবাস্টনের বাইশ গজ শুরু থেকেই পেসারদের সহায়তা করেছে। মজার ব্যাপার, লেগ স্পিনার শাদাব খানও উইকেট থেকে ভালোই বাঁক পেয়েছেন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন কিউইদের ‘বিগ ফিশ’ উইলিয়ামসনকে (৪১)। কিউইদের সংগ্রহ তখন ২৬.২ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৩। উইকেট কিছুটা ভেঙেছেও। বিশ্লেষক থেকে ধারাভাষ্যকারদের অনুমান, নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ তাড়া করা মোটেও সহজ হবে না পাকিস্তানের জন্য।
সবান্ধব কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মার্টিন গাপটিলকে বোল্ড আউট করেন মোহাম্মদ আমির। সেটি আবার নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ছিল আমিরের প্রথম ডেলিভারি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের সবশেষ ম্যাচেও নিজের প্রথম বলে উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন আমির। এ পেসার শুরুটা করে দেওয়ার পর কিউইদের গতির আগুনে পুড়িয়েছেন শাহিন আফ্রিদি।
১৩তম ওভারের তৃতীয় বলের মধ্যে ৪৬ রান তুলতে মোট ৪ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। পরের তিনটি উইকেট আফ্রিদির। কলিন মানরো, রস টেলর ও টম লাথামকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন বাঁমহাতি এ পেসার। এর মধ্যে রস টেলরের ক্যাচটি ছিল দুর্দান্ত। প্রথম স্লিপের দিকে ধেয়ে চলা ক্যাচটি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত দক্ষতায় গ্লাভস বন্দী করেন পাকিস্তান অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ। নিজের ৫ ওভারের মধ্যেই মাত্র ৯ রান দিয়ে ২ মেডেনসহ ৩ উইকেট নেন আফ্রিদি। শেষ পর্যন্ত তাঁর বোলিং ফিগার ১০-৩-২৮-৩।
পথ হারানো ইনিংসকে গড়েপিটে পথে ফিরিয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও জিমি নিশাম। ছয়ে ও সাতে নেমে ফিফটি তুলে নেন দুজনেই। দুজন জুটি বাঁধার আগে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে মাত্র দুবার ওভারপ্রতি রানরেট সাড়ে চারের ওপরে উঠেছে। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানোয় ক্রমশ নিম্নমুখী রানরেটকে ধীরে ধীরে টেনে তুলেছেন গ্র্যান্ডহোম-নিশাম জুটি। ২৭তম ওভার থেকে জুটি বেঁধে ৪৭.৪ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেছেন দুজন। শেষ ১০ ওভারে ৮৫ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।
আমির ১ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে ৬৭ রান দিয়েছেন। শাদাব খান ১০ ওভারে ৪৩ রান খরচায় নিয়েছেন ১ উইকেট। ওয়াহাব রিয়াজ ৫৫ রান দিলেও উইকেট পাননি।