স্বদেশ ডেক্স: প্রায় আট বছর আগে র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির ছাত্র লিমন হোসেন জানিয়েছেন তার উপর নির্মম নির্যাতনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা। বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘নির্যাতনরোধের দায় দায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনায় এক আবেগঘন পরিবেশে লিমন বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেয়ার সময়ে লিমন প্রায় পুরোটা সময়েই চোখের পানি মুছছিলেন। তার চাপা কান্নায় হলের অনেকেরই চোখ ভিজেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, শিরিন হক, এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ঢাবির কোটা বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা আতাউল্লাহ প্রমূখ। বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
লিমন জানায়, ২০১১ সালে ২৩ মার্চ বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটা বা চারটার সময় আমি আমার মায়ের সাথে গরু আনতে মাঠে যাই। তখন দুটি মোটর সাইকেলে ছয়জন র্যাব আসে। আমাকে বলে তুই সন্ত্রাসী। শার্টের কলার ধরে বলে, তোকে জেলে নিয়ে যাব। আমি বললাম, আমি একজন ছাত্র। এএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।এইচএসসিতে ভর্তি হবো। তারা আমার কোন নাম ঠিকানাও জানতে চায়নি। তারা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। আমি ভয়ে তাদের পা জড়িয়ে ধরি। পরে তারা আমার বাম পায়ে গুলি করে। আমি ওইখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই। আমাকে তারা ওই অবস্থায় পাশের সন্ধা নদীতে ফেলে দেয়। আমার পরিবার আর কিছুই জানে না। দুদিন পর মা বরিশালে আমাকে একটি হাসপাতালে খুঁজে পায়। ডাক্তারও আমার চিকিৎসা করেনি। তারা আমাকে গালমন্দ করে। র্যাব আমার মাকে কাছে আসতে দেয়নি। পরে অনেক কষ্টে মা তার নাকের ফুল বিক্রি করে আমাকে ২৬ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসে।
২৭ তারিখে আমাকে ওটিতে নেয়। আমি সারারাত বাইরে পড়ে ছিলাম। ওটি থেকে আমাকে যখন বের করে তখন দেখি আমার একটি পা নেই। ওটিতে আমি ঢুকলাম দুই পা নিয়ে, বের হয়ে আসলাম এক পা দিয়ে। মা আমার পাগল হয়ে গিয়েছিল। লোকে মাকে পাগল বলতো। আইন শালিশ কেন্দ্র আমাকে অনেক সহযোগিতা দিয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের বেড থেকে তারা আমাকে জেলে পাঠায়। ডা. জাফরুল্লাহ স্যারও আমাকে অনেক সহায়তা দিয়েছেন। যে দায়িত্ব রাষ্ট্র নেয়ার কথা ছিল সেই দায়িত্ব রাষ্ট্র নেয়নি। এখনো অনেক কষ্টে আছি। আজ (বুধবার) সকালে খবর পেলাম আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের বাড়ির জমিটুকুও দখল করেছে। আমার মা বাবা একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কার কাছে বিচার চাইবো। আমরা কোন বিচার পাচ্ছি না। লিমন আরো বলেন, আমি গণবিশ্ববিদ্যায়ল থেকে এলএলবি এলএলএম শেষ করেছি। এখনো রেজাল্ট পাইনি।