স্বদেশ ডেক্স: ২৮ বছর আগে এক হত্যা মামলার বিচারের ওপরে দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১৯৯১ সালে এ মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে আজ বুধবার রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ১৯৮৯ সালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুলের সামনে ছিনতাইকারীদের হাতে সগিরা মোর্শেদ সালাম নিহত হন।
হাইকোর্ট রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকার্যও সম্পন্ন করতে বলেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া ১০ বছর পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন সব রিভিশন ও বাতিল আবেদনের তালিকা করতে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রধান বিচারপতির কাছে দাখিল করতে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের প্রতি আদেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি পুরাতন এসব মামলা আমাদের শুনানি করতে দিলে তখন তা দেখা যাবে।’
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।
শুনানিতে আদালতে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ১৯৯১ সালে এ মামলার সাতটি সাক্ষী হয়েছে। তখন অধিকতর তদন্তের আদেশ হইলো। আবেদনকারীর নাম এফআইআর চার্জশিটে ছিল না। আদালত বলেন, তাহলে তিনি সংক্ষুব্ধ হলো? সে কিভাবে হাইকোর্টে আবেদন করলো? অধিকতর তদন্তে তার নাম নাও আসতে পারতো।
রাষ্ট্রপক্ষের উকিল আগের শুনানিতে বলেছিল, ‘ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাই না। বিষয়টাতো এরকম। মন্ত্রী সাহেবের ভাগ্নে…এতো ক্ষমতাবান তারা! অধিকতর তদন্তে বাধা কোথায়?’ তখন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মামলার দুই বছর পরে সাক্ষী দিয়েছে।
আদালত বলেন, মাত্র সাতটা সাক্ষী হলো। তদন্ত হলে কী যে হয়। দেখবেন চিকিৎসক হয়তো মারা গেছে। আল্লাহ জানে কী হবে…। এতদিনেও ভিকটিমের পরিবারকে রাষ্ট্র কোনো বিচার দিতে পারেনি। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তখন বলেন, আসামি মন্টু আছে তো।
তখন আদালত বলেন, ‘মন্টু থেকে কী হবে? মন্ত্রী সাহেবের ভগিনার নাম আসলে যে তিনি দোষী হতেন এমন তো না। তদন্ত হতে বাধা কোথায়? সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগসহ সবাই আমরা ভিকটিমের পরিবারকে বিচার দিতে পারিনি। এখনতো ওই রিকশাচালককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পেলেও তিনি কি আসবেন নাকি।’
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিম্ন আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ ভুল-এমন কোনো কথা তারা বলেননি। এখন অধিকতর তদন্তের জন্য টাইমফ্রেম ঠিক করার আবেদন জানাচ্ছি। এরপর আদালত আদেশ দেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সগিরা মোর্শেদ সালাম ১৯৮৯ সালে ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যান। বিকেল ৫ টায় সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নিজেকে বাঁচাতে দৌঁড় দিলে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ওইদিনই রমনা থানায় মামলা করেন তার স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী। পরে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় সাতজন সাক্ষীর। সাক্ষ্যে মারুফ রেজা নামে এক ব্যক্তির নাম আসায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই বছরের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় আদালত। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা (১০৪২/১৯৯১) করেন মারুফ রেজা। যিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়।
১৯৯১ সালের ২ জুলাই ওই তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে মর্মে আরেকটি আদেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এটি রাষ্ট্রপক্ষকে অবহিত করে। এরপর এ মামলা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুনানি শেষে বুধবার মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।