স্বদেশ ডেস্ক:
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা মেরে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে ২৮৮ জন কৃষকের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এই টাকা যথাযথ ব্যবহার না করে নানা কায়দায় আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
২৭ জুন কৃষকদের মেয়াদ উত্তীর্ণ শিমের বীজ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে ৪০ থেকে ৫০ টাকা মূল্যের মুলা ও পুঁইশাকের বীজ দিয়ে বাকি টাকার পুরোটাই মেরে দেয়া হয়েছে। এমনকি মাঠ দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়নি। যদিও ৬, ১৫, ১৬ ও ১৭ জুন এসব কর্মসূচি পালন দেখানো হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে না গিয়ে সিলেটে কৃষি অফিসের ছাদে মাঠ দিবস পালিত হয়েছে। স্থাস্থ্যবিধি কিংবা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অর্থ তুলে নেয়ার জন্য ব্যানার বদল করে মাঠ দিবসের নামসর্বস্ব এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সুন্দরভাবে মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে দেখিয়ে টাকাও তুলে মেরে দেয়া হয়েছে। অথচ নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকদের নিয়ে মাঠে এসব কর্মসূচি পালন করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। বাস্তবে কোনো কর্মসূচি পালন না করে শুধু কাগজে কলমে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এনএটিপি প্রকল্পে প্রতিদিন ৩০ জন কৃষকের ১টি ব্যাচ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। উপজেলা ভবনের তৃতীয় তলায় বারান্দায় কৃষক প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণের ব্যানার খুলে মাঠ দিবসের ব্যানার বদল করে ছবি তোলা হয়। প্রতিটি মাঠ দিবসে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। ১২টি মাঠ দিবসের পুরো টাকাই মেরে দেয়া হয়েছে। এনএটিপি কৃষক প্রশিক্ষণে প্রতিজনের খাবার ও নাশতা ববাদ খরচ ২০০ টাকা। সেই খাবার না দিয়ে ১০ টাকা মূল্যের নিুমানের নাশতা ও ৭০ টাকার আখনি দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের নিত্যনতুন ফসল বা প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে দক্ষিণ সুরমায় ২টি কৃষক গ্রুপকে উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণের জন্য বরাদ্দ আসে। এই বরাদ্দ থেকে ২১ জুন ১টি গ্রুপকে সিলেট সদর উপজেলায় ভ্রমণ করানো হয়। অন্য গ্রুপকে ভ্রমণ না করিয়ে শুধু এক প্যাকেট বিরিয়ানি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে গ্রুপের জন্য বরাদ্দকৃত ২১ হাজার ৫শ’ টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। জালালপুর ইউনিয়নের আলমদিন গ্রামের কৃষক নামর আলী অভিযোগ করেন, কৃষি কর্তারা মাঠে না এসে অফিসে বসে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। বৈশ্বিক এই মহামারীর মন্দার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের অর্থ হরিলুটকারীদের শাস্তি চাই। আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে নয়ছয় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কৃষকের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা জাতির জন্য লজ্জার।
অভিযোগের ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, বীজ আমি কিনিনি। তাই মেয়াদ উত্তীর্ণের বিষয় জানি না। অফিসের ছাদে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিন বলেন, ‘করোনার এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। এছাড়া উপজেলা চত্বরে জায়গা দেয়নি ইউএনও। নিুমানের খাবারের ব্যাপারে বলেন, হোটেল বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট করে এগুলোর আয়োজন করতে হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনিয়ম কিংবা হরিলুটের প্রশ্নই ওঠে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু চৌধুরী বলেন, আমি জায়গা দেইনি, এটি ডাহা অসত্য কথা। মাঠের কর্মসূচি মাঠে না করে অফিসে করা, এটা অন্যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত এক বছরের মধ্যে কৃষি কর্মকর্তা তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাননি।