স্বদেশ ডেস্ক:
পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কঠোর অবস্থানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর পেঁয়াজের দাম নিয়ে তুলকালাম কা-ের কারণেই এ বছর এই আগাম সতর্কাবস্থান। সংকট যেন না হয় সে জন্য এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দশম সভায় ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর বিশেষ করে রোজার আগে, কোরবানির ঈদের আগে ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এ ছাড়া বিশেষ করে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে বা উৎপাদন কম হলে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে। তাই এ নিয়ে প্রায়ই হইচই শুরু হয়। এ কারণেই আগাম সতর্কতা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাসকে লিড পিরিয়ড বিবেচনায় নিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বা সংগ্রহের জন্য টিসিবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে টিসিবি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উৎসে পেঁয়াজের উৎপাদন, মূল্য, চাহিদা এবং ক্রয়সংক্রান্ত আইন এবং বিধি পর্যালোচনা করে আমদানি বা ক্রয়ের লক্ষ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
জানা গেছে, দেশে মসলার আবাদি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৮৭ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। এতে গড়ে প্রতিবছর ২২-২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে পচে নষ্ট হয় ২০-৩৫ শতাংশ। এ হিসাবে বাজারে আসে ১৭-১৬ লাখ টন পেঁয়াজ। তার মধ্যেও ৩-৪ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয় পরিবহন ও সংরক্ষণের দুর্বলতার কারণে। ফলে দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ১২-১৪ লাখ টন বাজারে আসে। দেশের মোট জনসংখ্যা অনুযায়ী বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ লাখ টন। ফলে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে এলেও ঘাটতি রয়ে যায় ১২-১৪ লাখ টন, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, তাদের উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে মসলার ফলন অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে দেশে শীতকালের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও চাষাবাদ হচ্ছে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের কারণে এর ক্ষতি হয়। ফলে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করছেন কম।
এদিকে গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদের জন্য তিনটি পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এগুলো হলোÑ বারি পেঁয়াজ ২, ৩ ও ৫। এগুলোর হেক্টরপ্রতি ফলন হয় ১৮-২২ টন। এসব পেঁয়াজ সারাবছর চাষ করা সম্ভব হলে পেঁয়াজের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি ঘাটতি কমে যাবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।