স্পোর্টস ডেস্ক: বন্দুকের গুলির জবাব কামান দিয়ে দিল বাংলাদেশ। আবার এটিও বলা যায়, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলেছেন টাইগাররা। আফগানিস্তানের স্পিনের জবাব দিয়ে দিয়েছেন লাল-সবুজরা।
বিশ্বকাপের বিশালমঞ্চে ১০১৬ রান, ৩৩ উইকেট (চার বিশ্বকাপে)! আবার বিশ্বকাপে প্রথম ক্রিকেটার (প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৫ উইকেট শিকারিও ৫/২৯, এই বিশ্বকাপে সেরা স্পেল) হিসেবে এমন অর্জনের দিনে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের ট্র্যাকে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। প্রাণ সঞ্চার হয়েছে মৃতপ্রায় আশায়। পরিস্থিতি কী হবে সেটি পরে। সামনে প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তান। জেতার পর ভাবা যাবে কী হবে না হবে! সাকিবের রেকর্ডের শেষ নেই। ৪৭৬ রান করেছেন এখন পর্যন্ত। আর ১০ উইকেটও পকেটে চলে এসেছে। বিশ্বকাপের প্রথম অলরাউন্ডার যিনি এ কৃতিত্ব দেখালেন।
বন্দরে ডোবেনি টাইটানিক। সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ৬২ রানে টাইগারদের জয় (২৬২/৭, ৫০ ওভার)। ১৯১২ সালে সাউদাম্পটনের মেট ফ্লাওয়ার বন্দর থেকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিল টাইটানিক। প্রচার করা হয়েছিল এ টাইটানিক কখনো সাগরে ডুববে না। তবে সবকিছুকে মিথ্যা প্রমাণ করে টাইটানিক ডুবেছিল। বিশ্বকাপে টাইগারদের যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে। তার পর কিছুটা ঝিমিয়ে যায় তারা। বর্তমানে টাইগারদের সেমিফাইনাল স্বপ্ন অনেকটা সুতোয় ঝুলছে। হারলে বিশ্বকাপ থেকে ছুটি এমন ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় সাউদাম্পটনের এ বন্দরে। বিশ্বখ্যাত টাইটানিকও সাউদাম্পটনের এ বন্দর থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল। স্বপ্নযাত্রায় ছিল আনন্দের হিল্লোল। বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল ঠিকভাবেই। বন্দরে তো টাইটানিক ডোবেনি। তেমনি সাউদাম্পটনে টাইগারদের স্বপ্নযাত্রা ছুটেছে। গতকাল আফগানদের (২০০/১০, ৪৭ ওভার) ৬২ রানে হারিয়ে টাইটানিকের উজ্জ্বল যাত্রার মতো সেমিফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে যেতে হলে শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ডকে পরের দুটি ম্যাচে হারতে হবে। বাংলাদেশকে ভারত ও পাকিস্তানকে হারাতে হবে। বাংলাদেশ টেবিলের ৫ নম্বরে রয়েছে ৭ পয়েন্ট নিয়ে। বাংলাদেশ ৭ ম্যাচ খেলেছে। ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের পরের ম্যাচ পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে। পয়েন্ট টেবিলের উত্থান-পতন শেষ পর্যন্ত কোথায় যে যায়। সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন বেঁচে আছে।
ভারত মাত্র ২২৪ রান করেও ম্যাচটি জিতেছিল। বাংলাদেশ সেখানে নবী-রশিদ-মুজিব জাদুর পরও ২৬২ রান তুলেছে কাল। সাউদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোলে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে লড়াই করেছে।
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসবে। সেটি আগের দিনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কোচ স্টিভ রোডস। রুবেল হোসেন ও সাব্বির রহমান এক ম্যাচ খেলেই ছিটকে গেলেন। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দল যেন ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’। আপনি এক ম্যাচেই পরীক্ষিত এটি বুঝে ফেলা যায়। অবশ্য মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দিন ফিরে ভালোই করেছেন। সকালে বৃষ্টি হয়েছে। খেলাটির টস ১০ মিনিট পর অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ১০টা ৪০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। বাংলাদেশ চমক রেখেছিল। ওপেনার হিসেবে আসেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ডান-হাতি ব্যাটসম্যান লিটন দাস স্ট্রাইক নেন। দীর্ঘদিন পর তামিম স্ট্রাইক নিলেন না। আফগানিস্তানও মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল। স্পিন নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের ওপর।
এই মাঠে আফগানিস্তান ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছে। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বিশ্বসেরা। তারা বেশ কষ্ট করেছে। ২২৪ রান করতে পেরেছে তারা। মোহাম্মদ শামি শেষমেশ হ্যাটট্রিক না করলে ভারত ম্যাচটি হারতেও পারত। আফগানিস্তান স্পিন দিয়ে বিবস করে ফেলেছিল প্রায়। বাংলাদেশ কাল টস হেরে ব্যাটিংয়ে যায়। সৌম্য সরকার ডাউন অর্ডার চেঞ্জ করে ৫ নম্বরে নামে।
লিটন ও তামিম স্বাভাবিক চেষ্টাটা করতে থাকেন। মুজিব সেটি হতে দেননি। লিটনকে টোপ দেন। অফ-স্টাম্পের ওপরে বল ঝুলিয়ে দেন। লিটন (১৬) ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন হাসমতুল্লাহর কাছে। ক্যাচটি নিয়ে বিতর্ক আছে। আম্পায়ার একা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আপাতদৃষ্টিতে তিনি মনে করেছেন এটি আউট। তার পরও তিনি সহায়তা নিয়েছেন থার্ড আম্পায়ারের। আলিম দার আউট দেন। তবে ক্যামেরায় মনে হয়েছে, বল মাটিতে স্পর্শ করেছে। ফলে বিতর্ক শুরু হয়। ফিল্ড আম্পায়ারের ওপর ভরসা রাখেন তৃতীয় আম্পায়ার।
বাংলাদেশ ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায়। তামিম (৩৬) তিনে নামা সাকিবকে নিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন (দ্বিতীয় উইকেটে জুটি ৫৯ রান)। দলের ৮২ রানে তামিম নবীর বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন। সাকিব-মুশফিক ৬১ রান এনে দেন। আরও ছোট জুটি হয় মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক (৫৬) ও মুশফিক-মোসাদ্দেকের (৪৪)। সাকিব ৫১ রানে আউট হন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান করার কৃতিত্ব দেখান (১০১৬)। মুশফিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। কাল ৮৩ রানে ফেরেন। মাহমুদউল্লাহ ২৭ রান করেন। ব্যথা নিয়ে খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছিল তিনশর কাছাকাছি স্কোর করতে হবে। স্লো উইকেট। এই উইকেটে রান তোলা কঠিন হয়ে যায়। প্রতিপক্ষ পরে ব্যাট করতে এসে বিপাকে পড়বে।
একই সঙ্গে গুগলি, ক্যারম ও অফস্পিনার মুজিব অবিশ্বাস্য বোলিং করেছেন। ৩৯ রানে ছিল তার ৩ উইকেট। রশিদ খানের জন্য হতাশার দিন। ৫২ রান দিয়ে একটি উইকেটও পাননি। মোসাদ্দেক অবশ্য তার কাজ করেছে। ২৪ বলে ৩৫ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন। এই ইনিংসটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে শেষে বাংলাদেশ আরও রান করতে পারত। ৪৫ ওভারে ২২০ থেকে ৫০ ওভারে সেটি ২৬২। মনে হয়েছে স্লগ ওভারে দুর্বল বাংলাদেশ।