শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন

বদলে যাওয়া করোনাভাইরাস আসলটির চেয়েও দ্রুত ছড়ায়

বদলে যাওয়া করোনাভাইরাস আসলটির চেয়েও দ্রুত ছড়ায়

স্বদেশ ডেস্ক:

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাস যখন এশিয়ার দেশ চীন থেকে সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাতে চলে যায় তখন বিজ্ঞানীরা এর জিন সিকোয়েন্সিং করে তার নাম দেন D614। কিন্তু পরে এটি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজের গঠন ও চরিত্রে কিছু পরিবর্তন সাধন করে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় রূপান্তর।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণের সময় একেক অঞ্চলে এই ভাইরাসটির একেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দফায় দফায় এই পরিবর্তন বা এই রূপান্তর করে ভাইরাসটি। বর্তমানে যে ধরনের করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা তাকে চিহ্নিত করেছেন G614 হিসেবে।

এই ভাইরাসে সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৫ লাখ ২০ হাজার।

দ্রুত ছড়ায়

আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানের করোনাভাইরাসটি আসল ভাইরাসটির চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। অর্থাৎ শুরুতে এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে যতটা সংক্রমিত হতো, রূপান্তরের পর বর্তমান ভাইরাসটি তার চেয়েও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তবে এটি আসল ভাইরাসের চেয়ে মানুষকে আরও বেশি অসুস্থ করে দেয় কিনা সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর জিন বিন্যাসের মাধ্যমে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে, যার ফলাফল গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সেলে’। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই গবেষণাটি চালিয়েছে।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী এরিকা ওলমান মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘এই করোনাভাইরাসটিই এখন প্রাধান্য বিস্তার করছে। এটাই এখন করোনাভাইরাস।’

করোনাভাইরাসের রূপান্তরের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের এই দলটি আগেও গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

কারণ কী?

জিন বিন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষাগারে মানুষ ও প্রাণীর কোষের ওপরেও পরীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে রূপান্তরিত ভাইরাসটি এখন আগের ভাইরাসের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন তারা জানতে পারছেন যে পরিবর্তিত ভাইরাসটি সংক্রমণের দিক থেকে আসল ভাইরাসের তুলনায় শক্তিশালী।

তারা আরও বলছেন, করোনাভাইরাস কোনো একটি কোষকে আক্রান্ত করার সময় তার ভেতরে ঢুকতে স্পাইক প্রোটিনের কাঠামো ব্যবহার করে থাকে এবং রূপান্তরের ফলে সেই কাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটে।

গবেষকরা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন টিকার সাহায্যে এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর এই পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়ে কিনা। বর্তমানে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে যেসব গবেষণা চলছে তার বেশির ভাগই এই স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করেই করা হচ্ছে।

জীব বিজ্ঞানী বেটি কোরবার ও তার সহকর্মীরা গবেষণা রিপোর্টে লিখেছেন, ‘সারা বিশ্বে যেসব সংক্রমণ ঘটছে তাতে দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের বর্তমান G614 ধরনটি শুরুর D614 ধরনের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।’

‘এর ব্যাখ্যা হতে পারে যে পরিবর্তিত ভাইরাসটি অনেক বেশি সংক্রামক। তবে রোগ কতটা গুরুতর হবে তাতে নতুন ভাইরাসের ভূমিকা কী সে বিষয়ে আমরা কোনো প্রমাণ পাইনি।’

ব্রিটেনের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন ১ হাজার রোগীর ওপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, আগের ভাইরাসের তুলনায় নতুন ভাইরাসের কারণে তারা আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, ‘তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে রূপান্তরের ফলে ভাইরাসটি দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। হয়তো এর ফলে এটি বেশি সংক্রামক। তবে এই ধারণা এখনো নিশ্চিত নয়।’

কীভাবে ছড়ায়?

গবেষণায় দেখা গেছে, ১ মার্চ অবধি করোনাভাইরাসের G614 ধরনটি ইউরোপের বাইরে ছিল বিরল। কিন্তু মার্চ মাসের পর সারা বিশ্বেই এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিজ্ঞানীর বলছেন, করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরনটির সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার ঘটে নাক, সাইনাস ও গলায় এবং একারণেই এটি খুব সহজে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, রূপান্তরিত ভাইরাসটির দ্রুত ও বেশি মাত্রায় বেড়ে ওঠার কারণে এটিকে নির্মূল করতে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

তবে এই ভাইরাসের যে আর রূপান্তর ঘটবে না তা নয়। এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এর পরের ভাইরাসের সংক্রমণ শক্তি বর্তমান ভাইরাসটিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877