স্বদেশ ডেস্ক:
ভারতের রাজস্থানের পর দেশটির রাজধানীতে দিল্লির আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল দেখা গেছে। গতকাল শনিবার দিল্লি লাগোয়া গুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে পঙ্গপালের দল উড়ে যায়। তবে পঙ্গপালের দল গুরগাঁও কিংবা দিল্লিতে কোনো ক্ষতি করেনি। ধারণা করা হচ্ছে এ পঙ্গপালের দল উত্তরপ্রদেশে ফসলের ক্ষতি করবে।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার পর পঙ্গপাল গুরুগাঁওয়ের আকাশ দিয়ে উড়ে যায়।
গুরুগাঁওয়ের বাসিন্দা জয় ভট্টাচার্য তার বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎ তিনি একটানা ঝিঁঝি পোকার ডাকের মতো, কিন্তু তার থেকে কয়েকশো গুণ জোরালো শব্দ শুনতে পান।
তিনি বলেন, ‘তারপরে জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি হাজারে হাজারে পঙ্গপাল ঠিক জানালার বাইরেই। আমার বন্ধুও গুরগাঁওতেই থাকে। ওকে বলি দেখ, পঙ্গপাল হানা দিয়েছে আমাদের এখানে। তাড়াতাড়ি জানালা, দরজা সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। খুব ভালো করেই জানি একবার ঘরে ঢুকে পড়লে বিপদ হবে।’
জয় বলেন, ‘তারপর আমি যখন ছবি তুলতে শুরু করি, আকাশে যেন হলুদ রঙের মেঘ ছেয়ে গেছে আর একটানা শব্দ। ক্যামেরার লেন্সে কারও আঙ্গুলের ছাপ পড়লে যেরকম আবছা হয়ে যায়, সেরকম ছিল ব্যাপারটা।’
পুরো গুরগাঁওয়ের মানুষ পঙ্গপাল উড়ে যাওয়াও এই দৃশ্য দেখতে পাননি। একটি নির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে উড়ে যাওয়া পঙ্গপালের ওই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করেছেন অনেক মানুষ। তাদের অনেকেই আবার তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞানের অধ্যাপক অম্লান দাস বলেন, ‘এই পঙ্গপালের হানাকে প্লেগ বলা হয়। কয়েক দশক পর পর এরা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাকিস্তান হয়ে রাজস্থানে ঢোকে এরা। কয়েক দিন ধরেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছিল যে- গুরগাঁও, দিল্লি এই অঞ্চল দিয়ে যাবে এরা। মূলত ভূট্টা, গম, ধানের মতো ফসল খেতে এরা ভালবাসে। আবার উষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলও দরকার এদের। যদি একটা প্যাটার্ন দেখেন, তাহলে দিল্লির পর এরা গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চল, অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্তও আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তবে সেটা থিওরিটিক্যালি। এতদূর এরা নাও আসতে পারে। কারণ পঙ্গপাল ডানা গজানোর পরে গড়ে ৩৬ থেকে ৪০ দিন বাঁচে। এই যে দলগুলো, হানা দিয়েছে তারা আগে থেকেই উড়ছে। আর গড়ে প্রতিদিন ১০০ কিলোমিটার মতো উড়তে পারে ওরা। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের আগে পরেই এরা ওড়ে। সেই হিসাব করলে আরও দিন পনেরো লাগতে পারে পশ্চিমবঙ্গে আসতে। কিন্তু ততদিন এত পঙ্গপাল জীবিত থাকবে কী না, সেটা বলা কঠিন।’