গত বৃহস্পতিবার ১১ জুন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৪৯তম জাতীয় বাজেট পেশ করলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট, যদিও গত বাজেট তাঁর অসুস্থতার কারণে তাঁর পরিবর্তে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। একবার সংসদে বাজেট উত্থাপন করার পর একজন অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি যখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল, যখন আন্তর্জাতিক আর্থিক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো স্বীকার করে নিল বাংলাদেশ এশিয়ার সর্বাধিক ও বিশ্বের প্রথম ১০টি বিকাশমান অর্থনীতির একটি, তখনই বিশ্বের অনেক সম্পদশালী দেশসহ প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও কভিড-১৯ নামের এক অজানা মহামারির কারণে বড় ধরনের হোঁচট খেল। থমকে গেল সব দেশের অর্থনৈতিক পথ চলা। শুরু হলো এক মহাদুর্যোগের সময়। ঠিক এই সময় বাংলাদেশের মতো একটি ছোট উন্নয়নশীল দেশের পরবর্তী বছরের জন্য বাজেট ঘোষণা সাহসের কাজ বৈকি। বলা যেতে পারে, এটি বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্রান্তিকালের বাজেট। প্রথমটি ঘোষণা করা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের প্রথম অর্থবছরে (১৯৭২-৭৩)। দ্বিতীয়টি কাকতালীয়ভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার আমলে।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের কথা। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরলেন। পরদিন ১১ তারিখ শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারি হলো। ১২ তারিখ বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী ও অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হলো। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হলো স্বাধীনতার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনরত উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে। সেদিন একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে জাতির প্রতি আপনার বাণী কী?’ বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের কবিতা আওড়ে বলেছিলেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরো বাংলাদেশকে যে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে রেখে গেছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি ও তাঁর মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ তা অচিন্তনীয়। ৯ মাসের যুদ্ধে পুরো বাংলাদেশ এক বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দেশের প্রধান দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভাসমান মাইন বসিয়ে সম্পূর্ণ অকেজো করে রেখে গেছে। জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা নেই। পাকিস্তানি যে মুদ্রা ছিল তা ব্যাংকের ভল্ট থেকে বের করে জ্বালিয়ে দিয়েছে প্রায় সবখানে। তখন অন্যান্য দেশেও অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই কঠিন সময়ে ভারত তার সাহায্যের ধারাবাহিকতায় ১৬ মে বাংলাদেশকে ২৪ কোটি টাকার ঋণ ঘোষণা করে। অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশ, যেমন—সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইরাক বাংলাদেশকে বেশ কিছু পণ্য সাহায্য করে, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গম অন্যতম।
আর্থিক বছরের শেষ দিন ৩০ জুন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেট ঘোষণা করলেন। তখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বাজেট যদিও দেশের আয়-ব্যয়ের একটি আগাম ধারণা, তবে এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, বাজেটে উল্লিখিত ব্যয় কোথায় কোথায় হবে আর এই ব্যয়ের অর্থ জোগান কিভাবে হবে তার উল্লেখ। বর্তমান বিশ্বে সবাই জোর দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ব্যয়ের অর্থ আহরণ করতে। কারণ বাইরের উৎস থেকে সুদে টাকা ধার করলে আর তা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে তখন দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। একটি দেশ দেউলিয়া হয়ে পড়লে বুঝতে হবে, তার বিপদ সন্নিকটে। শুরুতে বাংলাদেশের নিজস্ব আয়ের তেমন কোনো উৎস ছিল না। কৃষকদের খাজনা মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিযোগ্য পণ্য বলতে একমাত্র পাট ও চা। তারও ক্রেতা সীমিত। আবার দুটি সমুদ্রবন্দর বন্ধ থাকায় কোনো কিছু রপ্তানি করা সহজ ছিল না। ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। আজকের প্রজন্মের কাছে এটি অবিশ্বাস্য ঠেকবে যে বাংলাদেশ শুরুতে বেশ কিছু দেশের সঙ্গে তখন পণ্য বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার ফলে ঘোষিত বাজেটের কিছু অর্থায়ন করা সম্ভব হয়েছিল। জাপান এগিয়ে এসেছিল কিছুটা আর্থিক সহায়তা নিয়ে। রাজস্ব বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে। তখন প্রথম শ্রেণির গ্রেড শুরু হতো ৪৫০ টাকা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু জানতেন, এই বেতনে সংসার চালানো কঠিন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো বেতনই নিতেন না। তিনি সরকারি কর্মচারীদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করলেন। মাসের ১৫ দিন অন্তর জনপ্রতি দুই কেজি গম আর আধাকেজি চিনি। এই গম ও চিনি বেশির ভাগই বিদেশ থেকে প্রাপ্ত রিলিফ। সরকারের রাজস্ব বাজেটের অর্থের জোগান দেওয়ার যিকঞ্চিৎ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের তিন বছরের মাথায় যখন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর জীবদ্দশায় দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।
তাঁর কন্যার আমলে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন, যা গত আর্থিক বছরের তুলনায় ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যার অর্থ ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশের গড় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ঠিক গত বছরের মতো ৮.২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, কভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি এই বছরসহ আগামী কয়েক বছর কমতে থাকবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (বাংলাদেশসহ) গড়ে কমবে ২.৭ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সেই প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ (২০২০-২১) পর্যন্ত হতে পারে (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো), যদিও মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ তার প্রত্যাশিত ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
বাজেট নিয়ে এরই মধ্যে অনেক বিজ্ঞজন, সর্বদা অর্ধেক গ্লাস পানি নিয়ে ঘোরাঘুরি করা পণ্ডিতরা তাঁদের মতামত দেওয়া শুরু করেছেন। আমি সেদিকে যেতে চাই না। শুধু দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে চাই। এই মহামারির কারণে সব দেশেই অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে। বর্তমানে সরকারি হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১৫ শতাংশ মানুষ কর্মহীন, যা গত ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩.৮ শতাংশ। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫১ শতাংশ পরিবার আয়হীন বা বেকার, এরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ৪.৯ শতাংশ। এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে যারা আয়হীন তাদের অনেকে দিন আনে দিন খায়। সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে তাদের কর্ম বা আয়ের ব্যবস্থা করা। বেসরকারি খাতের ওপর আস্থা রাখা যায় না, তা তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাদের আয়ের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে, তবে সব সময় প্রণোদনা দিয়ে চলতে পারে না। বাংলাদেশ কোনো ওয়েলফেয়ার স্টেট, কল্যাণ রাষ্ট্র নয়। তা হবে বাংলাদেশের জন্য বিলাসিতা।
প্রধানমন্ত্রী সব সময় একটি কথা বলেন—বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কিছু পায়। তাঁর দাবিটি অহেতুক নয়। পাকিস্তানের ২৩ বছরে আওয়ামী লীগ ১৩ মাস কেন্দ্রে আর পূর্ব পাকিস্তানে দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মারাত্মক খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল। অনেকটা দুর্ভিক্ষাবস্থা। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমানকে ভুখা মিছিল থেকে ধরে এনে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী দেখলেন যে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই; সুতরাং বাজারে চাল থাকলেও তা তারা কিনতে পারছে না। তিনি বুঝলেন, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছাতে হবে। তিনি কালক্ষেপণ না করে সারা পূর্ব পাকিস্তানে টেস্ট রিলিফের কাজ শুরু করেছিলেন। কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ২০০ কোটি টাকা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন। ২০০ কোটি টাকা তখন কম টাকা নয়। এই টেস্ট রিলিফের কারণে সারা বাংলাদেশে তখন একটি গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ নির্মাণ ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। মানুষের হাতে টাকা গেলে তখন মানুষ তার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করার সক্ষমতা ফিরে পেয়েছিল। আসল কথা, এই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে সরকারকে টাকা খরচ করতে হবে, তা জনগণের কাছে যেতে হবে। সেই টাকা আসবে প্রধানত দুর্নীতি বন্ধ করলে। তারপর দেশের আয়কর আহরণ বাড়াতে হবে। অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করলে সাধারণ মানুষের ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। সিগারেট, কসমেটিকস, তারকা খচিত হোটেলে খাওয়া, বিদেশ থেকে আমদানি করা ফলমূল ইত্যাদির ওপর কর বৃদ্ধি একটি যৌক্তিক ব্যবস্থা। তবে মোবাইল ফোনের ওপর কর বৃদ্ধি সমীচীন নয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন ধসে পড়ছে। এটি থামানোর জন্য অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা অচিরেই চালু করতে হবে। দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী বর্তমানে এক ধরনের অলস জীবন কাটাচ্ছে। এর জন্য এক ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদের অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার কোনো বিকল্প শিগগির বের করা যাবে না। এর জন্য শিক্ষকদের অ্যানালগ যুগ থেকে ডিজিটাল যুগে নিয়ে আসতে হবে আর ছাত্রদের কাছে ইন্টারনেটের সুযোগ ও স্মার্ট মোবাইল সুবিধা সহজলভ্য করে অনলাইন শিক্ষা ও পরীক্ষা দ্রুত শুরু না করে দিলে তা দেশ ও সমাজের বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে। এর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে নির্ধারিত ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা যেতে পারে। শিক্ষক ও ছাত্রদের স্বল্পমূল্যে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন সরবরাহ করা যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সবাই এখন অনলাইনে। শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, তাদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনে হবে। বাংলাদেশে এই করোনাকালে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাতে গোনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই কাজটি করে পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তাদের শেষ হয়ে যাওয়া হেকেপ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপটিক্যাল ফাইবার লাইন (তিন হাজার ৫০০ কিলোমিটার) দিয়ে যে সুবিধা করে দিয়েছে, তা খুব কম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কাজে লাগায়। সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে, দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
কৃষি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে যত রকমের সহায়তা করা যায় ততই মঙ্গল। স্বাস্থ্য খাতে যত টাকাই দেওয়া হোক না কেন, তা কোনো কাজে লাগবে না যদি এর সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বন্ধ করা না যায়। ১০০ টাকার জিনিস হাজার টাকায় আর হাজার টাকার জিনিস লাখ টাকায় আর লাখ টাকার জিনিস কোটি টাকায় ক্রয় বন্ধ না করলে এ খাতের কোনো উন্নতি হবে না। বাংলাদেশে এই সময়ে এত ভয়াবহ দুর্নীতি অন্য কোনো খাতে নেই। এটি যে এই সরকারের আমলে চালু হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এটি এক দশক ধরে চলছে। জাতির কল্যাণে এ খাতকে বাঁচাতে হবে। অনেক দেশে দুর্নীতির জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। বাংলাদেশে প্রয়োজনে আইন করে এই বিধান চালু করার এখন সময় এসেছে।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে একটি চিতাভস্ম থেকে উঠে আসা জাতি হাঁটতে শিখেছে। মানুষের আশা, তাঁর কন্যার হাত ধরে সেই জাতি আবার দৌড়াতে শুরু করবে। জাহাজের নাবিক যদি দক্ষ হয়, তাঁর দৃষ্টি যদি স্থির থাকে, তাহলে শত ঝড়ঝাপটা উপেক্ষা করে জাহাজ বন্দরে পৌঁছবেই। এই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকন্যাই হতে পারেন সেই নাবিক।
শেষ করার আগে বঙ্গবন্ধুকন্যার উদ্দেশে বলি— আপনিও পিতার মতো বলুন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক