বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

৯ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাবেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা

৯ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাবেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা

স্বদেশ ডেস্খ:

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগেই ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নগদে লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে যেকোনো সময় ব্যাংক তাদের ২০১৯ সালের জন্য নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ সুবাদে ৯ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার নগদে লভ্যাংশ পাবেন পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদে লভ্যাংশ দেয়ার জটিলতা দূর করার পর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আর লভ্যাংশ পাওয়ার কোনো বাধা থাকল না। শুধু ফসল ঘরে তোলার জন্য তাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদন পর্যন্ত।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নগদে লভ্যাংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছিল, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে কোনো ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নগদে কোনো লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। একই সাথে যেসব ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের কম রয়েছে তারা নগদ বা স্টক কোনো লভ্যাংশই বিতরণ করতে পারবে না।

ইতোমধ্যে ৯টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডাচ বাংলা, মার্কেন্টাইল, স্ট্যান্ডার্ড, ইস্টার্ন, এক্সিম, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, প্রাইম ও উত্তরা ব্যাংক রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে ৩০টি। এ ব্যাংকগুলোতে দেশী-বিদেশী মিলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী রয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। বাকি ৬৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে।

আলোচ্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে উল্লিখিত ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ ৯ ব্যাংকের শেয়ারধারণকারীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ আছে ব্যক্তিশ্রেণীর উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো নগদে যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে এতে ২৭ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণীর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২০০ কোটি টাকার লভ্যাংশ বিতরণ করতে হবে ৯ ব্যাংকের। ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় এ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত দু’টি কারণে ব্যাংকগুলোর ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে নগদে লভ্যাংশ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। প্রথমত, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে আর্থিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত দুই মাসে ব্যাংকগুলোতে টাকা জমার চেয়ে উত্তোলন হয়েছে বেশি হারে। এ সময়ে আবার নগদে লভ্যাংশ বিতরণ করলে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। দ্বিতীয় কারণ হলো জুলাই মাস থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ সময়ে প্রণোদনার জন্য সরকার এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আর এ প্রণোদনা বাস্তবায়ন হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। সরকার প্রণোদনার অর্থের সংস্থান করতে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হবে।

এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর নিজেরই টাকার সঙ্কট বেড়ে গেলে ঋণের জোগান দেয়া কষ্টকর হবে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসক্ষমতা বাড়াতেই ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে নগদে লভ্যাংশ দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এ দিকে, ব্যাংকগুলোতে আগে থেকেই খেলাপি ঋণ বেশি ছিল। এর ওপর জুন পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ না করলেও ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি বলা যাবে না। অর্থাৎ ৮৬ মাসের জন্য ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর নগদ আদায় অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। সব মিলেই ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা ধরে রাখতেই ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে নগদ লভ্যাংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যোগদানের পরে তিনি গত ১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে বৈঠকে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার বিধিনিষেধ শিথিল করতে অনুরোধ করেছিলেন। বিএসসি চেয়ারম্যানের অনুরোধেই বাংলাদেশ ব্যাংক তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো। এর ফলে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগেই মুনাফা পেতে আর কোনো বাধা থাকল না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877