শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ন

অনুমোদন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ

অনুমোদন ছাড়া ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় পরীক্ষাছাড়া গণহারে ওষুধ বা প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা নেই, রোগ উপশমে নিশ্চিত কোনো ওষুধও এখনো পাওয়া যায়নি৷ রেমডেসিভির, আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিনসহ গুটিকয়েক ওষুধ চিকিৎসকরা ব্যবহার করছেন৷ পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এর সবই পরীক্ষামূলকভাবে৷

করোনার চিকিৎসায় পরীক্ষামূলভাবে ব্যবহৃত এসব ওষুধ ও থেরাপির ফলাফল না দেখে গণহারে তা ব্যবহার ঠিক নয় বলে মত আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলা গঠিত কারিগরী কমিটির সদস্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষেশজ্ঞরাও একই মত দিয়েছেন৷

ডা. মুশতাক বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা নানা উপায়ে চেষ্টা করছেন। তবে এগুলো সবই পরীক্ষাধীন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে যদি তারা প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা একটা সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারব।”

অন্যদিকে, এসব ওষুধ প্রয়োগের পক্ষের চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো কার্যকর ওষুধ না আসায় রোগীদের সুস্থ করার লক্ষ্যে তারা এসব ওষুধ ব্যবহার করছেন। তবে তারাও চান এসব ওষুধের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হোক।

দেশে কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আর বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে রিসার্চ ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কোনো ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে কেউ অনুমতি নেয়নি বলে কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে।

অনেক দেশের মতে বাংলাদেশেও এখন কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে৷ এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির প্লাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করা হয়৷

প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সুস্থ ব্যক্তিদের প্লাজমা দানের আহ্বান জানিয়ে প্রচার চালান হচ্ছে৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত ১৬ মে থেকে প্লাজমা সংগ্রহ শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ জন প্লাজমা দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চারজনসহ ৮টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ জনের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে ওই প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রিসার্চ ইথিকস কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন তারা। প্রটোকল অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৪৫ জনের ওপর তারা এটি প্রয়োগ করবেন ।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর যেহেতু কোনো ওষুধ নাই তাহলে এটা চেষ্টা করতে তো সমস্যা নাই। এখন যে যার মতএা করে দিচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রিতভাবে এটির প্রয়োগ হলে কাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে, ফলাফল কী আসছে, তা বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।”

নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যেন প্লাজমা থেরাপি দেওয়া যায়, সেজন্য কর্মসূচি নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধও করেছেন তিনি।

তবে বিএমআরসি বলছে, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের জন্য ঢাকা মেডিকেল ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দিতে পারে না। বিএমআরসি থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে৷ এখন পর্যন্ত তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন জানানো হয়নি৷

ঢাকার বাইরের একটি সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গাইডলাইনে না থাকার পরও এই ওষুধের ব্যবহার করছেন কেন- জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “কোনো ওষুধই তো নাই। আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন তো নতুন ওষুধ না। এটার সাইড ইফেক্ট নাই, সহজলভ্য এবং দাম কম।

“আমার হাসপাতালে বেশ খারাপ সিম্পটম নিয়ে এসেছে, এমন কয়েকজনের উপর প্রয়োগ করেছি, তারা এখন ভালো আছে। তাদের আমি অন্য কোনো ওষুধ দিইনি।”

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে৷ এটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের ওষুধ৷ বেক্সিমকো ফার্মা রেমডেসিভির তৈরি করে তা সরকারের কাছে দিয়েছে৷

করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ১৪ জন রোগীর ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন।

তবে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এই ওষুধ প্রয়োগের ফল এখনো বোঝা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি৷

রেমডেসিভির ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হলে বিএমআরসির অনুমোদন লাগবে, যেটা এখনো নেয়া হয়নি৷

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ‘কিছুটা কাজ করছে’ তা যথা নিয়মে প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ৷ ‘নতুবা পরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে’৷ ডয়চে ভেলে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877