স্বদেশ ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা সব পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে এই আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় বহাল রেখেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটির ওপর আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ১৯ মে ১৫টি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে ওই রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ২(১১) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক বয়সসীমা নির্ধারণের বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বকেয়াসহ বন্ধ থাকা সম্মানিভাতা পরিশোধ বা চালু করতে বলেছে আদালত। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করতে বলেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আরেকটি গেজেটের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর জারি করা গেজেটে বয়স প্রতিস্থাপন করে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর যে পরিপত্রটি জারি করা হয় পরবর্তী সময়ে সেটিই ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
তাতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে। এই দুটি গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ২(১১) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক বয়সসীমা নির্ধারণের ধারার আংশিক চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধারা হাইকোর্টে পৃথক ১৫টি রিট অবেদন করেন।
রিটকারীদের একজন বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসান রিট আবেদনে জানান, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন অধিদপ্তরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিপত্রে বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম বয়সসীমা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তার বয়স ছিল ১২ বছর ৪ মাস ১২ দিন। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। ওইসব রিটে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখেনি। মুক্তিযুদ্ধ মানুষ আবেগ দিয়ে করে, দেশপ্রেম থেকে করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বয়স, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে যোগ দিয়েছেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে বয়স কোনো কারণ না।