শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
করোনা ‘সন্দেহ’ হওয়াই কাল হলো তার!

করোনা ‘সন্দেহ’ হওয়াই কাল হলো তার!

স্বদেশ ডেস্ক: রিয়াজুল আলম লিটন। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জে। ঢাকার একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। শুধুমাত্র শরীরে জ্বর থাকায় করোনা ‘সন্দেহে’ অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালে।

ইউনাইটেড হাসপাতাল তার নমুনা নিয়ে হাসপাতালের ফলাফলের আগ পর্যন্ত  আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখেন। গতকাল বুধবার বিকেলেই হাসপাতালে যান তিনি। আর রাতেই মারা গেছেন আগুনে পুড়ে।

পরে জানা যায়, লিটনের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। তাই পরিবার ও স্বজনদের আক্ষেপ, করোনায় আক্রান্ত না হয়েও আগুনে পুড়ে নির্মম মৃতু হলো তার।

আজ বৃহস্পতিবার নিহত লিটনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে। গতকাল রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে মারা য়াওয়া পাঁচজনের মধ্যে একজন এই রিয়াজুল আলম লিটন।

নিহত লিটনের পরিবার জানায়, বিদেশি একটি বায়িং হাউজের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন লিটন। স্ত্রী ও সাত বছরের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শ্যামলী এলাকায় থাকতেন তিনি।  গতকাল অফিসে যাওয়ার পর তার গায়ে জ্বর এসেছিল। পরে পরীক্ষা করতে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে নমুনা নিয়ে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।  এরপর রাত সাড়ে ৯টার পর লাগা আগুনে পুড়ে মারা যান লিটন।

লিটনের বড় ভাই রইসুল আজম ডাবলু বলেন, ‘শুধু জ্বরের জন্য যদি লিটন গতকাল পরীক্ষা করতে হাসপাতালে না যেত, তাহলে হয়তোবা আজ তার লাশ দেখতে হতো না। সেই করোনা পরীক্ষার ফলাফল  ঠিকই নেগেটিভ এলো। কিন্তু আমার ভাইকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো।’

আজ দুপুর সাড়ে ৩টায় রইসুল আজম ডাবলু বলেন, ‘ভোরে লিটনের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। দুপুরে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে এখন লাশ দাফনের কাজ চলছে।’

স্বজনরা জানান, নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের সুজালপুর এলাকায়। তার বাবা মৃত ফরজান আলী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাস আক্রান্ত পাঁচ রোগী মারা গেছেন। সব রোগীদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গতকাল রাতেই জানিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহতরা অন্যরা হলেন, মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন অ্যান্থনী পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

গতকাল রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে আগুনের সূত্রপাত হয়। হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ১০টা ২৫ মিনিটে। হাসপাতালের ভেতর থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

পাঁচ রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিনিউকেশনে অ্যান্ড বিসনেস ডেভেলপমেন্টেরের হেড ডা. সাগুফতা আনোয়ার। এরপরে মধ্যরাতেই ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিবৃতিতে বলা হয়, গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতাল সংলগ্ন মূল ভবনের বাইরে ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। সেই আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেই সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন প্রচণ্ড দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দুর্ভাগ্যবশতভাবে সেখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়নি এবং ভেতরে থাকা এই পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন। এই আইসোলেশন ইউনিটের পাঁচজনের সবাই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, দমকল বাহিনীকে তাৎক্ষণিক খবর দেওয়া হয়। হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করছেন এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সম্পর্কে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করছে।

পরে আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালের সম্প্রসারিত অংশে ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ড্রিল এবং ফায়ার-টিম ছিল না। ১১টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের মধ্যে মাত্র ৩টির মেয়াদ ছিল। অন্য ৮টি অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। হাইড্রেন্ট কে চালাবে, কে কাজ করবে, কার দায়িত্ব এগুলো সুনির্দিষ্ট করা ছিল না।’

মেয়র আরও বলেন, ‘হাসপাতালে মানুষ ভর্তি হয় আরোগ্য লাভ করার জন্য, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে, তারা এখানে অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেলেন।’ তিনি সকল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সেফটির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877