শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ধান কাটায় ফটোসেশনের বাহার

ধান কাটায় ফটোসেশনের বাহার

মো: তোফাজ্জল বিন আমীন:

বিদঘুটে এক অন্ধকার বিরাজ করছে পৃথিবীজুড়ে। এক অদৃশ্য শত্রুর দাপটে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ক্ষত-বিক্ষত। পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার নিয়ে যারা হুঙ্কার দিত তারা আজ বলছে মানুষ মারার সব কৌশলের কাছে আমরা পরাজিত। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ও লাশের সংখ্যা। এর শেষ কোথায় তা-ও কেউ বলতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত ৭৫ বছরে এমন বিশ্বসঙ্কট আর আসেনি। শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয়, সুপার পাওয়ার দেশগুলো লণ্ডভণ্ড; সেখানে বাংলাদেশে চলছে ধান কাটার বাহারি সার্কাস। ফেসবুক খুললেই দেখা যায় বাহারি পোজ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীরা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। দেখতে মন্দ লাগে না। কিন্তু দামি প্যান্ট, ঘড়ি, জুতা, শার্ট কিংবা পাঞ্জাবি পরে কৃষকের সাজ কি মানায়? কৃষকের পোশাক এত দামি হয় না। একজন নেতা ধান কাটতে গেলে সাথে ২০ জন যাচ্ছে ছবি তুলতে। অনেকে ক্ষেতে বসেই মোবাইলে লাইভ কিংবা ছবি তুলতে গিয়ে নষ্ট করছেন কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল। আবার কেউ বা কাটছেন কৃষকের কাঁচা ধান। জনসেবার নামে কৃষকের কাঁচা ধান কাটার লাইসেন্স রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। এটা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ।

আমাদের দেশে এপ্রিল-মে মাস কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়ে বোরো ধান পাকে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতায় ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। ফলে ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের সাথে প্রশাসনও স্নায়ুচাপে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন কৃষকের পাশে দাঁড়াতে। প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু চিত্রের উল্টো পিঠে যা দেখলাম তা সত্যিই বেদনায়ক ও লজ্জার। কৃষকের ধান কেটে দিয়ে ছাত্রলীগ যে সুনাম কুড়িয়েছিল তা আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের ধান কাটা কর্মসূচিতে কৃষক কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছিল। কিন্তু ফটোসেশনের প্রতিযোগিতায় কৃষকের পাকা ধান ফসলি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। টাঙ্গাইল ২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান মনির কৃষকের কাঁচা ধান কেটে দেয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাও অংশ নেন। জুতা মোজা টাই পরে তারা ধান কাটতে নেমে গেলেন। ধান কাটার চেয়ে ছবি তোলায়ই বেশি ব্যস্ত ছিলেন তারা। এ সময় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন জমির মালিক। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। কারণ ক্ষমতার দাপটের কাছে জমির মালিক খুবই তুচ্ছ এক মানুষ। এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন জনপ্রতিনিধি জাতির প্রয়োজন আছে কি না তা পাঠকরাই বিবেচনা করবেন।

করোনায় কৃষকদের পুঁজি করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-নেত্রী রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে দলবল নিয়ে ধান কাটার ফটোসেশনের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অনেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন। পুলিশ প্রটোকল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ধান ক্ষেতে জুতাসহ নেমে পড়লেন। কাঁদার মধ্যে জুতা হাতে নিয়ে কয়েক গোছা ধান কাটেন। তার এ ধান কাটার দৃশ্য ভিডিও করেন তারই এক কর্মী। একইভাবে চোখে সানগ্লাস আর দামি শাড়ি পরে সেজেগুজে ধান কাটার পোজ দেন সরকারদলীয় মহিলা এমপি হোসনে আরা। এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন দৃশ্যে নিন্দার ঝড় বইছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ জাতি কখনো আশা করেনি। জনসেবার নামে তামাশা বন্ধ করা হোক। কৃষকের বিপদের সময় যেখানে তাদের পাশে দাঁড়ানো জনপ্রতিনিধিদের কর্তব্য, সেখানে তারা কৃষকের কাঁচা ধান কেটে উল্লাস করে ছবি তুলছেন। এ কেমন জনপ্রতিনিধি? জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আচরণ তো এমন হওয়ার কথা নয়। তা হলে কেন হলো? বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

রাজনীতিতে তামাশা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কৃষকের ধান কাটা নিয়ে তামাশা এবারই কিন্তু প্রথম দেশবাসী দেখল। জনসেবার নামে লোক দেখানো তামাশা জাতির কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কৃষকের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করে প্রশংসা কুড়ানোর সময় এখন নয়। এটা সবারই মনে রাখা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধির কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ মানুষকে লজ্জা দেয়। আশা করি এটা তারা অনুধাবন করবেন। আর যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তারা যতই ক্ষমতার অধিকারী হন না কেন? রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে, এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877