শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ ব্যাংক হিসাব তলব

ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ ব্যাংক হিসাব তলব

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের এবং ব্যাংকের হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের এ সংক্রান্তে পারমিশন মামলায় এক আবেদনের শুনানি শেষে এদিন আদালত এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে দুদকের সাময়িক বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে সংস্থাটি। ডিআইজি মিজানের বিষয়ে আদালতে ক্রোক আবেদন করা এবং ক্রোকের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে ৫৫ লাখ টাকার বেইলি রিটজ নামীয় ভবনের চতুর্থ তলার অ্যাপার্টমেন্টের কটি ফ্ল্যাট এবং কার পার্কিং স্পেসসহ ৫৫.৫১ অযুতাংশ জমি, ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাকরাইলে একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট, দোকান, জমি-যার মূল্য মোট ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। ধানমন্ডি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যাংক হিসেবে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা। আদেশের বিষয়টি দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদের আবেদনে বলা হয়-ডিআইজি মিজান স্বনামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত ১৩ জুন দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। তিনি বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদগুলো বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারার বিধানমতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনাকাক্সিক্ষত ফল লাভ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ফলে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ/সম্পতি ক্রোক/ফ্রিজ করার প্রার্থনা করা হলো।

বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিগুলো অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারার অধীন বর্ণিত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিগুলো এ মুহূর্তে ক্রোক করা না হলে তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে; ফলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার সম্ভাবনা কম। ক্রোক করা সম্পত্তি যেন হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানা স্বত্ব বদল রোধের নিমিত্তে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্ট্রার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধানমন্ডি/মোহাম্মদপুর/গুলশান/সাভার/উত্তরাকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

আর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের বিষয়ে আদেশে উল্লেখ করা হয়, ধানমন্ডি শাখা সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজারকে হিসাবের ওপর অবরুদ্ধ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ তার অবরুদ্ধ হিসেবে জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থায়ই উত্তোলন করা যাবে না। এদিকে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে মিজানের স্ত্রী, দুই সন্তান এবং ভাই ও ভাগ্নের হিসাব সম্পর্কেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।

রবিবার ও মঙ্গলবার আলাদাভাবে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দেয় দুদক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয়ও একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে অনুরোধ জানানো হয়। দুজনের ঘুষের লেনদেনসংক্রান্ত কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রবিবার বিশেষায়িত সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেলে (এনটিএমসি) পাঠিয়েছে দুদক। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর দুজনের কণ্ঠস্বর এক হলে বা কথোপকথন মিলে গেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কমিশনে সুপারিশ করবে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান টিম।

এর অংশ হিসেবে দুজনকে ঘুষের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি পরীক্ষায় প্রমাণসাপেক্ষে দুজনের বিরুদ্ধে মামলারও সুপারিশ করবে কমিটি। এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর ডিভোর্সের খবরের পর গত বছর জানুয়ারিতে আলোচনায় আসেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। পরে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজে নামে দুদক।

অনুসন্ধান শেষে দুদকের পরিচালক গত ২৩ মে কমিশনে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই হিসাব দাখিলের পর তিনি তার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খোন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ডিআইজি মিজান। এ ঘটনায় বাছির সাময়িক বরখাস্ত হন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877