বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

টাকায় করোনার ঝুঁকি

টাকায় করোনার ঝুঁকি

স্বদেশ ডেস্ক:

জনসমাগম স্থান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে সভা-সমাবেশ, সেমিনার নিষিদ্ধ করা হয়েছে; বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। টাকার হাতবদলে করোনা ভাইরাস ছড়ানোরও ঝুঁকি রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত টাকার নোট অন্য কেউ ব্যবহার করলে তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; কিন্তু নানা ধরনের গ্রাহকের সেবাদাতা ব্যাংকগুলোতে এখন পর্যাপ্ত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দুই-একটি ব্যাংক টাকা গণনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কিছু প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা নিলেও অধিকাংশ ব্যাংক কিছুই করেনি। এদিকে করোনার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি ও করণীয় শীর্ষক সভা ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বৈঠক হওয়ার কথা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে সর্বমোট ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার নোট ও কয়েন ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোটের মধ্যে জনগণের হাতে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যমানের ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার নোট ও কয়েন। অর্থনীতি সচল থাকার অন্যতম সূচক হচ্ছে টাকার হাতবদল। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত হাতবদল হবেÑ এটিই নোট ও কয়েনের মূল বৈশিষ্ট্য।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাই নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি নোটের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। নোটের বিকল্প বলতে ‘কন্টাক্টলেস পেমেন্ট’-এর কথা বলা হয়েছে। তাই ব্যাংক নোট স্পর্শ করার পর লোকজনকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কেননা, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপাদান মানবদেহের মতো এসব নোটে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ও নোংরা নোট ‘ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বহন করতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং দিনে দুবার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ব্যাংকের কার্ডগুলোও মুছে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

এর আগে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যবহৃত ব্যাংক নোটের জীবাণুনাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি ব্যবহৃত ব্যাংক নোটগুলোও আলাদা করে রাখা হয়। জীবাণু নাশের জন্য অতি বেগুনি আলো বা উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে ১৪ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের পর এসব নোট ফের বাইরে ছাড়া হয়।

বিবিসির এক খবরে বলা হয়, ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে অনেক আগেই। ২০১৫ সালে দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন। গত বছর আগস্টে বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছিলেন এক দল দেশি গবেষক। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গবেষকদের গবেষণা মতে, টাকা বা ডলারের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিনিময়ে করোনা ভাইরাস ছাড়াতে বা বিস্তার লাভ করতে পারে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। বিদেশ ফেরত অনেকেই কোয়ারেনটিনে রাখা হয়েছে বা থাকতে বলা হয়েছে; কিন্তু টাকার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সচেনতাবিষয়ক সভা হবে।

ওই সভায় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা নির্বাহী পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও গভর্নর উপস্থিত থাকবেন। এতে করোনার ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ বিষয়ে ধারণা দেবেন ডা. শহিদুল ইসলাম। ওই সভার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে টাকার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে এইচএসবিসি, ওয়ান ও ব্যাংক এশিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংকের ক্যাশ কর্মকর্তারা বিশেষ গ্লাভস পরে সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি অফিসে রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গ্রাহকরা গেলেই তাদের স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। অন্য ব্যাংকগুলোয় কর্মকর্তা ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন; কিন্তু ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877