রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

পাপিয়ার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে দুদক ও সিআইডি

পাপিয়ার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে দুদক ও সিআইডি

স্বদেশ ডেস্ক:

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার আয়-ব্যয়, অভিজাত হোটেলে বিপুল পরিমাণ টাকার বিল পরিশোধসহ তার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের করা মামলাটির ফাইল এত দিন র্যা বের হাতে থাকলেও এখন তা সিআইডির হাতে এসেছে। সিআইডিও মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। গত ২২ জানুয়ারি পাপিয়ার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় দু’টি মানিলন্ডারিংয়ের মামলা হয়। মামলাটি র্যা বের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন, সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। গতকাল রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম দিদার হোসাইন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিন শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে এ মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সাথে ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্ত্রীর মতি সুমনের পাঁচ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সিআইডির সূত্র জানায়, পাপিয়ার মানিলন্ডারিংয়ের ফাইলে তার আয়-ব্যয়, অভিজাত হোটেলে বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধ, গাড়ি, বাড়ি ও ফাটের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার ফার্মগেটে থাকা দু’টি ফাটের কথাও রয়েছে। এসব নিয়ে র্যা ব পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সুমন র্যা বকে জানিয়েছে, তিনি ওই ফাটে ভাড়ায় থাকেন। তার পক্ষেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি সুমন। এ দিকে সুমন ও পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের এক সদস্য জানান, র্যা ব সম্প্রতি তাদেরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে পাপিয়ার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানিলন্ডারিংয়ের মামলা তদন্ত করার জন্য বলেছে। তারা প্রাথমিক কাজও শুরু করেছেন। শিগগির সব কিছু বেরিয়ে আসবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।

এ দিকে জেলার একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে রাজধানীতে বিলাসী জীবনযাপনের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। তারা তার আত্মীয়স্বজন, জমিজমা, বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ির খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার সাথে কার কার সখ্যতা ও কারা কারা তার পার্টিতে যেতেন তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। যুবলীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া পাপিয়াকে আটকের পর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন ভুক্তভোগী ব্যক্তি। পাপিয়া নরসিংদী যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে নিয়ে নানা অপকর্ম করতেন। মাদক, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসাসহ তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ব্যবসা করে পাপিয়া টাকার পাহাড় গড়েন। যার প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পাপিয়া কয়েক বছরও আগেও সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তারা কাপড়-চোপড় অতি সাধারণ ছিল। কয়েক বছর থেকে তিনি উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন করছেন। রাজধানীর ফার্মগেটে তার একটি ফাটের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও নরসিংদী শহরে নামে-বেনামে তিনি অনেক জমি কিনেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নজনকে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়ার অঢেল টাকার উৎস খোঁজা হচ্ছে। যদিও ইতোমধ্যে তার অবৈধভাবে টাকা আয়ের তথ্য তারা জেনেছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, নারীদের দেহব্যবসায় বাধ্য করার পর গোপনে ভিডিও ধারণ, পরে জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদীর বিভিন্ন কলেজপড়–য়া ছাত্রীদের দিয়ে তিনি গুলশানে হোটেল ভাড়া নিয়ে দেহব্যবসা চালাতেন। তাদের প্রত্যেকে মাসিক ভিত্তিতে বেতনও দিতেন। অভিজাত হোটেলে রুম ভাড়া নেয়া, অতি উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন, অল্প দিনে ধনী হওয়া, নতুন বাড়ি করা, জমি কেনা এসব বিষয় গোয়েন্দাদের নজরে আসার পর থেকে তদন্ত শুরু হয়। গত তিন মাস থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। র্যা ব জানিয়েছে, গত তিন মাসে পাপিয়া গুলশানের একটি অভিজাত হোটেল ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৯০ লাখ টাকা। তার নামে অভিজাত হোটেলের রুম বরাদ্দ থাকত। তিনি মদ, ইয়াবা ও নারীদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের মনোরঞ্জন করাতেন।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, র্যা ব থেকে পাপিয়ার মানি লন্ডারিংয়ের ফাইল তাদের কাছে এসেছে। তারা প্রাথমিকভাবে কাজ শুরুও করেছেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি গোপনে দেশত্যাগের সময় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি শামিমা নূর পাপিয়াকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে র্যা ব। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেনÑ পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার। এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে জাল মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের রওশনস ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিদেশী মদসহ অনেক অবৈধ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা করা হয়। এ ছাড়া মামলার অপর দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পাপিয়া ও তার স্বামীর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক : এ দিকে বিদেশে অর্থ পাচারসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুদকের কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজকে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানান, পাপিয়ার সম্পদ, তার উৎস, মতা, বিদেশে অর্থপাচার সব কিছুই অনুসন্ধানের আওতায় আছে। পাপিয়ার আশেপাশে যারা ছিল তাদের দিকেও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে। তার সহযোগীরাও আইনের আওতায় আসবে।

সূত্র জানায়, যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ পাচার এবং কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের এ অনুসন্ধান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877