মো: মাকসুদ উল্যাহ্
–
অসহায় রোগীরা হাসপাতালে এসে শয্যা খালি না পেয়ে মেঝেতে থাকতে বাধ্য হন। চার শ’ শয্যার সরকারি হাসপাতালে এক হাজার ২০০ রোগী ভর্তি হয়ে ৮০০ জন মেঝেতে থাকে। শয্যার অভাব, সেই সাথে রোগী অনুপাতে ডাক্তারেরও অভাব।
অন্য দিকে, সরকারি চাকরিরত চিকিৎসকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের যথেষ্ট সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে নতুন সৃষ্ট মেডিক্যাল কলেজগুলো পর্যন্ত সেসব বিষয়ের কনসালট্যান্ট ও অধ্যাপক পদ না থাকায় এবং পদায়ন না করার কারণে রোগীরা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং জেলা সদর হাসপাতালে নেফরোলজি, নিউরোলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ইত্যাদি এবং শল্য চিকিৎসার কিছু শাখার চিকিৎসকের পদ নেই। নতুন সৃষ্ট মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এসব বিষয়ের কনসালট্যান্ট এবং অধ্যাপকের পদ নেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদ থাকলেও পদায়ন করা হচ্ছে না। ফলে জনগণ কর দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাক্সিক্ষত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনসংখ্যা অনুপাতে সব বিষয়ে সব ক্যাটাগরিতে বিশেষজ্ঞ সরকারি চিকিৎসকের নতুন পদ সৃষ্টি করে সেগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেয়া এখন সময়ের দাবি। তাহলে অসহায় রোগীদের প্রাপ্ত চিকিৎসার মান এবং পরিমাণ উভয়ই বাড়বে।
জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল অফিসারের পদগুলো অর্ধেকের বেশি খালি হয়ে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মেডিক্যাল অফিসারের অনেক পদ খালি। ১৭ কোটি মানুষের জন্য অন্তত এক লাখ ৭০ হাজার ডাক্তার দরকার। সরকারি খাতে কমপক্ষে ৮৫ হাজার ডাক্তার দরকার। সরকারি খাতে আছে ২৬ হাজার ডাক্তার! অথচ ৩৯তম বিসিএসে কৃতকার্য আট হাজার ৩৬০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না! তাদের আরো একটি বিসিএস দিতে বাধ্য করে হয়রানি করার কী দরকার? চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিসিএসে উত্তীর্ণ চিকিৎসকেরা নিয়োগ বঞ্চিত থাকবে কেন? ৯ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারদের ক্যাডারভুক্ত করা হয়নি। ফলে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের অবহেলা ও বঞ্চিত করে সুষম ও কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা অসম্ভব। হাসপাতালে নতুন ভবন বানিয়ে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
নাগরিকদের সুষম চিকিৎসাসেবা দিতে হলে একটি দেশের বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হয় চিকিৎসা খাতে। সেখানে এ দেশে বরাদ্দ ৪.৯ শতাংশ মাত্র! বিষয়টি আফসোসের!
তাই অসহায় রোগীদের কষ্ট লাঘব করার জন্য হাসপাতালগুলোতে নতুন ভবন নির্মাণ করে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, জনসংখ্যা অনুপাতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্সের পদসংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবং উল্লিখিত বিষয়গুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক কনসালট্যান্ট এবং অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি এবং পদায়নের জন্য অবিলম্বে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হোক এবং বাস্তবায়ন করা হোক।
লেখক: চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।