রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন

দিল্লি সহিংসতার সূত্রপাত যেভাবে

দিল্লি সহিংসতার সূত্রপাত যেভাবে

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা এখন পর্যন্ত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত অসংখ্য ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুই গ্রুপের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ আড়াইশ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন।

দিল্লির সহিংসতা ‘দাঙ্গার’ দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। উগ্রবাদি হিন্দুরা মসজিদে আগুন দিয়ে সেখানে হনুমানের পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। ভারত সরকার সহিংসতা বন্ধে চেষ্টা করলেও সহিংসতার আগুনে টিকছেনতা। রাজ্যসরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক ও দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সহিংসতা বন্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষ। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত শনিবার রাত থেকেই এ ঘটনার সূত্রপাত। জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের কাছে শাহিনবাগের আদলে কয়েকশো মহিলা সেই দিন সিএএর বিরুদ্ধে ধরনায় বসেন। ওই অবস্থান বিক্ষোভের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই রাস্তা। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের কাছে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও তাতে কোনও ফল মেলেনি।

ওই বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র পথ অবরোধের বিরুদ্ধে একটি ভিডিও পোস্ট করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) সমর্থকদের রোববার বিকেল ৩টা নাগাদ মৌজপুর চৌকে আসতে বলেন। এরপরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ জাফরাবাদ এলাকায় সিএএ বিরোধী এবং সিএএ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দুই পক্ষের থেকেই একে অপরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথর ছোড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয় পুলিশকে।

রোববার সন্ধ্যে নাগাদ কপিল মিশ্র আরও একটি ভিডিও টুইট করেন, যেখানে তাকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ডিসিপি ভিসি প্রকাশের সঙ্গে দেখা যায়। কপিল হুমকি দিয়ে বলেন যে তিনি এবং তার সমর্থকরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন এবং তিনি চলে যাওয়ার পরও দিল্লি পুলিশের কোনও নিষেধ শুনবেন না তারা। সিএএ বিরোধীরা যে রাস্তা আটকে রেখেছেন তা যেনতেন প্রকারের খোলার ব্যবস্থা করবেন তিনি।

এরপর রোববার রাতে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু লোক ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে একটি ট্রাকে করে ইট বয়ে নিয়ে চলেছে। সোমবার সকাল থেকেই ওই অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক হিংসা। মৌজপুরে এক ব্যক্তিকে পুলিশের সামনেই গুলি চালাতে দেখা যায়। তার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ওই ব্যক্তির নাম শাহরুখ বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে খবর।

এই ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয় গোটা এলাকা জুড়ে। যার জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তর দিল্লির জনজীবন। দুই পক্ষের কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না, তাই এখনও থমথমে ওই এলাকাগুলো। মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর ৬৭টি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতার জন্য প্রায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। শ্যুট-এট-দ্য অর্ডার জারি করা হয়েছে।

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে সেনাবাহিনীকে ‘উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দিল্লি পুলিশ ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম’।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877