শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঘুষকাণ্ডে নির্মাণ পেছালেও চীনেই ভরসা সরকারের

ঘুষকাণ্ডে নির্মাণ পেছালেও চীনেই ভরসা সরকারের

ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের কথা ছিল আরও আগেই। চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সড়ক সচিবকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টায় ঝুলে যায় সে প্রক্রিয়া। এর পর প্রতিষ্ঠানটিকে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নের দিকে ঝোঁকে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এ খাতে বিপুল অর্থ খরচ না করে অন্য দাতা সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা ভাবে সরকার। একাধিক প্রস্তাবও পায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

চীনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বলা হয়, ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারকের এ প্রকল্পটি দুদেশের সম্পর্কের নিদর্শন। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়। তা ছাড়া একক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সীমিত দরপত্রে মনোনীত করারও প্রস্তাব আসে। এবার সেদিকেই হাঁটছে সরকার। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনায় শেষমেশ চীনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি জিটুজি ভিত্তিতে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতেই (এলটিএম) এটি বাস্তবায়নের প্রস্তাবসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জুলাইয়ে চীন সফরে যাচ্ছেন তিনি। তার আগেই প্রকল্পটির রূপরেখা দৃশ্যমান হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২৬ প্রকল্পে ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। তারই একটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প। এ জন্য ১৬০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ীই সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসারে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে কাজের ঠিকাদারি ঠিক করে দেয় চীন সরকার। বিপত্তি ঘটে দর কষাকষির শেষপর্যায়ে এসে। সড়ক পরিবহন সচিব হিসেবে নজরুল ইসলাম যোগদানের পর ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর চায়না হারবারের দুজন কর্মকর্তা ও তাদের বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করতে যান। ওই সময় চায়না হারবারের কর্মকর্তারা গ্রিন টির একটি প্যাকেট দেন সচিবকে। বাসায় ফিরে তিনি ওই প্যাকেটে ১০ বান্ডিলে এক লাখ মার্কিন ডলার দেখতে পান। এর পরই চায়না হারবারকে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঘুষ চেষ্টার দায়ে সরিয়ে দেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ প্রস্তাবে ১৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা দাবি ছিল। তবে ১৩ শতাংশ শুল্ক মূল প্রস্তাবের বাইরে রাখতে বলে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রথমে অবশ্য দর প্রস্তাব করে ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। পরে ২২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু অর্থ জোগাড়ে ব্যর্থ হয় সরকার। তাই নিজস্ব অর্থায়নের পরিবর্তে দাতা সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তখন এডিবি, কুয়েতসহ একাধিক দাতাসংস্থার প্রস্তাবও আসে; হাল ছাড়েনি চীনও। পরে এলটিএম পদ্ধতিতে চীন সরকারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত আসে। এর ফলে দেশটির সরকার মনোনীত তিনের অধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বাংলাদেশ। এতে কিছুটা হলেও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রথমে ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়কটির একপাশে সার্ভিস লেন করার কথা ছিল। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধীরগতির যানবাহনের জন্য উভয় পাশেই সেøা মুভিং ভেহিকল লেন থাকবে। এ ছাড়া নতুন করে প্রকল্পের চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট, এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) রিপোর্ট, বিল অব কোয়ালিটি (বিওকিউ), দরপত্র শিডিউল, নকশা, পুনর্বাসন পরিকল্পনা, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এ জন্য প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে এলটিএম। এতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।’ ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রসঙ্গে সড়ক সচিব বলেন, ‘এ নিয়ে ডকুমেন্ট হালনাগাদ করে বোঝা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে ধীরগতির গাড়ির জন্য উভয় দিকে সার্ভিস লেন থাকবে। আগে ছিল একপাশে। ডিজাইন পরিবর্তন, সময় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে ব্যয় বাড়তেও পারে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের রাষ্ট্রপতির সফরকালে সম্পাদিত চুক্তির পর প্রকল্পের দর কষাকষিসহ নানা ধাপ পার হতেই শেষ হয়ে যায় ২০১৭ সাল। এর পর ওই প্রতিষ্ঠানকে সরিয়ে প্রায় দেড় বছর পার হয় অর্থায়নের ব্যপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতেই। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে (সওজ) চিঠি দিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রয়োজনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগেরও পরামর্শ দিতে পারে মন্ত্রণালয়। আর এসব কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে সম্পন্নের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। তবে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ শেষে দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগতে পারে। অবশ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি হালনাগাদ করে চলতি জুনের মধ্যেই তা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে চীনা দূতাবাসে পাঠাতে চায় মন্ত্রণালয়। এর পরই দেশটির পক্ষ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রস্তাব করা হতে পারে।

গত মাসে এলটিএম পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ)। তা অবগত করা হয় ইআরডিকে। আগের নকশা পরিবর্তনসহ যাবতীয় তথ্য হালনাগাদ করতে মন্ত্রণালয় থেকে এখন সওজকে চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877