স্বদেশ ডেস্ক:
মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সে ঋতুর রাজা। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু। স্বাগত বসন্ত। প্রাণ খুলে তাই যেন কবির ভাষায় বলা যায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এতো ফুল ফোটে/ এতো বাঁশি বাজে/ এতো পাখি গায়’। বসন্তের এই সকল সৌন্দর্যের সমাহার যেন তাহিরপুরের শিমুল বাগানে।
বাগানটি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থান মানিগাওঁ গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। যা জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগান নামেই পরিচিত।
প্রকৃতির সাথে এক আপরূপ মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে শিমুল বাগানটি। মেঘালয় পাহাড় ও যাদুকাটা নদীর তীরে প্রাকৃতির এক কাব্যিক ভাবনার স্থান দেশের বৃহত্তর এই শিমুল বাগান।
প্রতি বছরের মতই শীতের শেষে ফাল্গুনের আবেশে প্রয়াত বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদিনের লাগানো তিন হাজারের অধিক শিমুল গাছের ডালে ডালে পাপড়ি মেলেছে শিমুল ফুল। ফলে দূর থেকে দেখলে মনে হয় লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে দেশ-বিদেশের পর্যটক, প্রকৃতি প্রেমী আর সৌন্দর্য পিপাসুদের ডাকছে এই বাগান।
শিমুল বাগানে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন বাগান মালিক ও স্থানীয়রা।
দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমীদের নিরাপত্তার সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি।
তিনি জানান, আগত সকল পর্যটকদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এছাড়া আগতদের সুবিধার্থে সম্প্রতি বাগানের মালিকপক্ষ থেকে একটি খাবার হোটেল নির্মাণ ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে বলে জানান, শিমুল বাগানের প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদিনের ছেলে সাবেক বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, ১৪ ফ্রেরুয়ারি ও শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় প্রকৃতিপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। এছাড়াও প্রতিদিনেই আসছে দেশ-বিদেশী পর্যটকগণ। বাবার রেখে যাওয়া এই দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগানটি দেখাশুনা করার পাশাপাশি আরো কিভাবে ভাল রাখা যায়, কীভাবে সৌন্দর্য বাড়ানো যায় সে চেষ্টা আছে।
তিনি আরো বলেন, বাগানটিকে ঘিরে কিভাবে একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট করা যায় সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এখানে আরো বেশী পর্যটক আসবে।
দর্শনার্থী প্রীনিতা প্রিয়াংকা বলেন, এই বাগানটি দেখতে অসাধারণ, এত বড় শিমুল বাগান দেশের কোথাও আর দেখেনি। যার ফলে বাগানের ভিতরটায় গেলে এক অন্য রকম ভাললাগার জন্ম নেয়। মন হারিয়ে যায় অন্য এক অজানা ভুবনে। নদী, পাহাড় আর শিমুল বাগান প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলনমেলা এখানে।
শিমুল বাগানে বেড়াতে আসা স্থানীয় সোহেল আহমেদ সাজুসহ অনেকেই বলেন, দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা শিমুল বাগানে শীত, বর্ষায় সব সময় দল বেঁধে ছুঠে আসে সৌর্ন্দয উপভোগ করতে। ফলে হাওর, পাহাড়, নদীর পাশেই শিমুল বাগান সব মিলে মিশে মানিগাঁও গ্রামটি প্রকৃতির কাব্যিক ছন্দময় হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে ৯৮ বিঘা অনাবাদী জমি ক্রয় করে বাণিজ্যিকভাবেই এই শিমুল বাগান তৈরীর চিন্তা করেন। এই চিন্তা থেকেই তিনি এবাগানে সারিবদ্ধভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসারি বাসে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে জন প্রতি ১০০ টাকা লাউড়েরগড় বাজার। বাজার পেরিয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান।
আবার, সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু পার হলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দিয়ে তাহিরপুর উপজেলা এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগানে যাওয়া যায়।