স্বদেশ ডেস্ক:
চীনে প্রাদুর্ভাব আকারে দেখা দেয়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের বাজার। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা হয় এমন পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। পেঁয়াজের অস্থিরতা না কমতেই রসুনের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদার দামও। ভোক্তাদের জন্য দুঃসংবাদ, আমদানিপণ্য না হলেও একেকটি লাউ ছুঁয়েছে সেঞ্চুরি (১০০ টাকা)। ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি করলা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। দেশী নতুন রসুন পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিদরে। দেশী আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও চীনা আদা করেছে ডবল সেঞ্চুরি (২০০ টাকা)। বাজারের এমন অস্থিরতা নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষদের।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। খুচরা বাজারে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, চীনে করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে আমদানিকারকরা বাজারে রসুনসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে তৈরি হয়েছে সরবরাহ সঙ্কট। বাজারে নতুন দেশী রসুন এবং আমদানি করা চীনা রসুনের সরবরাহ কম থাকায় দাম এত বেড়েছে।
সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরো বাড়বে বলে বিক্রেতাদের আশঙ্কা। তারা জানান, দেশের রসুনের বাজার পুরোটাই চীননির্ভর। চীনা রসুনের মান ভালো হওয়ায় এটির চাহিদাও বেশি। দেশে কিছু রসুন উৎপাদন হলেও চাহিদার বড় একটি অংশের জোগান দিতে হয় চীন থেকে আমদানির মাধ্যমে। করোনাভাইরাসের কারণে চীনে শিপমেন্ট বন্ধ। যারা আগে এলসি খুলেছিলেন, তাদের চালানও আসছে না। নতুন করে কেউ এলসিও খুলতে পারছেন না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, দেশে সমুদ্রপথে আমদানি হওয়া রসুন শতভাগই আসে চীন থেকে। গত অর্থবছরে চীন থেকে ৬৪ হাজার ৭৯৬ টন রসুন আমদানি হয়। রসুনের মতো আদার ৬০ শতাংশই আমদানি হয় চীন থেকে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় চীন থেকে একটি বড় অংশ আমদানি করা হয়। কিন্তু ভাইরাসের প্রভাবে সেখানেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এতে সরবরাহ সঙ্কটে রসুনের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে সঙ্কট বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে দামও। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সঙ্কটের মূলে রয়েছে আমদানিকারকদের কারসাজি। করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে বাড়তি লাভের আশায় তারা বাজারে চীনা রসুন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, চীন থেকে জাহাজে পণ্য তুললে তা দেশে আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। আগে যেসব রসুন দেশে এসেছে, সেগুলো কোথায় গেল?
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভরা শীতেও সবজির দাম আশানুরূপ কমছে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতি কেজি ঢেঁড়সের দাম এখন ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি করলা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজিদরে। এক কেজি কচুর লতি কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। শজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। বাজারে গতকাল এক কেজি ভালো টমেটোর দাম ৫০ টাকা চাইতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। বড় আকারের একটি বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ভালো মানের বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও এক কেজি কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। সস্তার মধ্যে আছে মুলা ও শালগম ২০ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কুমড়ার কেজি ২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আলুর দাম প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, ২০১৯ সালে ১৮টি সবজির গড় দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ১০ থেকে ২০ টাকা কমে কেজি নেমেছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। মিয়ানমারের আদার দাম কমে ১৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন করে দাম বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালের। পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি চিনিগুঁড়া চাল ৯০ থেকে ৯২ টাকা। খুচরা বাজারে দর ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। দুই মাসে বাড়তি কেজিপ্রতি ১২ টাকার মতো। বাজারে এখন ফার্মের ডিমের ডজন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১২৫ থেকে ১৩০ টাক কেজি। গরুর গোশতের কেজি ৫৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিটি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া পাবদা ৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, মৃগেল ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, কৈ ৩০০ টাকা, কাতল ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।