দুই বছর পেরিয়ে আবার নির্বাচনি উৎসবের আমেজ টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে। অভিনয় শিল্পীদের নেতা নির্বাচনের এবারের আসর বসছে ২১ জুন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরিচিতি সভা ছিল ১৫ জুন। প্রার্থীরা সেখানে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে শোনা গেছে। কিন্তু সেদিন সাংবাদিকদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না!
প্রহরী জানান, সাংবাদিকদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই। কেন নেই, তিনি সেটা বলতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশনের সদস্য অভিনেতা নরেশ ভূঁইয়া জানান, সাংবাদিকদের ভেতরে ঢোকার কোনো অনুমতি নেই। কয়েকজন সাংবাদিক এসেছিল, তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে, এর বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে কী হচ্ছে শিল্পী সংঘের এ নির্বাচনে? প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই সাধারণ শিল্পীদের কাছে। তবে কি এতদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘের অনিয়ম’-এর যে চিত্র প্রকাশ হয়েছে, সেটার এক প্রকার প্রতিশোধ নিতে সাংবাদিক বয়কট! যদি তাই হয়, তবে বিষয়টা হাস্যকর। কারণ সাংবাদিকের কাজ সংবাদ সংগ্রহ করা। আর অনিয়মের যে সংবাদ, সেটা যতই ঢেকে রাখা হোক-একদিন প্রমাণসহ কেউ না কেউ প্রকাশ করবেই। ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র দুই বছর (২০১৯-২১) মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির এ নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন, তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে সংঘের বর্তমান কমিটি। এবার পরিচিত শিল্পীদের পাশাপাশি নতুনরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রচারে আলোচনায় আছেন অনেকেই। তাদের নিয়েই আলোচনা বেশি শোবিজ অঙ্গনে। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বর্তমান সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। সে ভাবনা থেকেই এবার নির্বাচন করছি না। আরেকটি বিশেষ কারণ, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর আর বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ উদযাপন হবে। এ দুটি বিষয় নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। সংগঠনের দায়িত্বে থাকলে তো সম্ভব হবে না। তবে সংগঠনের যে কোনো কাজে আমি পাশে থাকব।’
এবার সভাপতি পদে লড়বেন ৩ জন প্রার্থী। অনেকেই মনে করছেন, লড়াইটা মূলত হবে শহীদুজ্জামান সেলিম ও তুষার খানের মধ্যে। সভাপতি পদের অন্য প্রার্থী হলেন মিজানুর রহমান। সহ-সভাপতির ৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৬ জন। তারা হলেন-আজাদ আবুল কালাম, আহসানুল হক মিনু, তানিয়া আহমেদ, ইউজিন ভিনসেন্ট গোমেজ, ইকবাল বাবু ও দিলু মজুমদার। এবার সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান।
দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন আশরাফ কবীর, আনিসুর রহমান মিলন, আমিনুল হক আমিন, রওনক হাসান ও সুমনা সোমা। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আগেই নির্বাচিত হয়ে আছেন লুৎফর রহমান জর্জ। অর্থ-সম্পাদকের একটি পদের জন্য লড়ছেন দুজন। তারা হলেন-নূর এ আলম (নয়ন) ও মাঈন উদ্দিন আহমেদ (কোহিনূর)। দপ্তর সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন ৪ জন।
তারা হলেন-আরমান পারভেজ মুরাদ, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, গোলাম মাহমুদ ও মেরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সম্পাদকের ১টি পদের জন্য লড়ছেন ৩ জন। তারা হলেন-স্বাগতা, পাভেল ইসলাম ও রাশেদ মামুন অপু। আইন ও কল্যাণ সম্পাদকের ১টি পদের জন্য লড়ছেন শামীমা তুষ্টি, মম শিউলী (মমতাজ বেগম) ও শিরিন আলম। প্রচার ও প্রকাশনা পদের জন্য প্রাণ রায়, শফিউল আলম বাবু ও শহিদ আলমগীর। তথ্য প্রযুক্তি পদে মুলুক সিরাজ ও সুজাত শিমুল।
কার্যনির্বাহী ৭টি পদের জন্য লড়াই করছেন মোট ১৮ জন সদস্য। তারা হলেন-বন্যা মির্জা, রাজিব সালেহিন, জাকিয়া বারী মম, নুরুন জাহান বেগম, রেজাউল করিম সরকার, নাদিয়া আহমেদ, মাসুদ আলম তানভীর, মাহাদী হাসান পিয়াল, মুনিরা বেগম মেমী, ওয়াসিম হাওলাদার, জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মাহাবুবুর রহমান মোল্লা (নিথর মাহবুব), সনি রহমান, শামস সুমন, আবদুর রাজ্জাক, সামসুন নাহার শিরিন ও সেলিম মাহবুব। এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন খাইরুল আলম সবুজ।
শিল্পী সংঘের সর্বশেষ তালিকা থেকে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬শ’। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত শিল্পকলা একাডেমিতে। ভোটগ্রহণ চলবে ২১ জুন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এবারের স্লোগান, ‘জিতবে একুশজন। হারবে না কেউ।’