সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

পাকিস্তানের ‘ফিনিক্স পাখি’ শোয়েব মালিক

পাকিস্তানের ‘ফিনিক্স পাখি’ শোয়েব মালিক

Pakistan batsman Shoaib Malik plays a shot during the one day international (ODI) Asia Cup cricket match between Pakistan and India at the Dubai International Cricket Stadium in Dubai on September 19, 2018. (Photo by ISHARA S. KODIKARA / AFP) (Photo credit should read ISHARA S. KODIKARA/AFP/Getty Images)

স্বদেশ ডেস্খ:

বাইশ গজে খেলতে এসে বারবার হোঁচট খেয়ে পড়েছেন তিনি। তারপর আবার নতুন উদ্যোমে উঠে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাট চালিয়েছেন, জিতিয়েছেন দলকে। যেন এক ফিনিক্স পাখি! প্রতিবার পোড়া ভস্ম থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের মালিক। শোয়েব মালিক। বয়স ৩৭ বছর। গত শতাব্দীর একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি কিনা বাইশ গজে তরুণদের সাথে এখনো তাল মিলিয়ে খেলছেন। তাকে কি কিংবদন্তী বলা যায়?

প্রশ্নটা তুলেছে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর।

শুক্রবার বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন শোয়েব মালিক। করেছেন ৪৫ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৫৮ রান। জিতিয়েছেন দলকে। হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

ক্রিকেটকে ২০ বছর দিয়েছেন মালিক। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক চড়াই উৎড়াই পার হতে হয়েছে তাকে। কতবার যে দল থেকে বাদ পড়েছেন, আবার ডাক পেয়েছেন- তার হিসেব কি জানেন?

যদি না জেনে থাকেন, তাহলে দেখে নিন।

সিংগার ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ, ২০০০
অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০০ সালে। সিংগার ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ নামের টুর্নামেন্টে তরুণ এই ক্রিকেটারকে নয় নম্বরে নামায় পাকিস্তান। পুরো সিরিজে মাত্র একবারই ব্যাট হাতে নামেন তিনি। আর বল হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। ২৮ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন এই অফস্পিনার। ব্যাট-বলে ভালো করতে না পারায় ছিঁটকে পড়েন দল থেকে। এরপর শারজাহে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে আবার তার ডাক পড়ে।

আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি, ২০০২
প্রথমবার নয় নম্বরে ব্যাট করতে নামলেও পরে হঠাৎ করেই তাকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামানো হয়। চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১ রান করেন তিনি। আর বল হাতেও জাত চেনাতে পারেননি। দুটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। ১৩ রানে মাত্র ১ উইকেট নেন। এরপর আরো এক বছরের জন্য অপেক্ষা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে আবার ডাক পরে তার।

২০১০ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ…
… এরপর অনেক উত্থান-পতন-উত্থান। এক পর্যায়ে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় মালিকের হাতে। সেটি ২০০৭ সালের কথা। দায়িত্ব পালনের ১৮ মাস পর তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হলো তাকে। ম্যানেজমেন্টই বললো, মালিক দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারছেন না।

সেই সময়টায় বল হাতে নিজেকে মেল ধরতে পারছিলেন না মালিক। তবে ব্যাট হাতে ভালো করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথমটিতে ৪৯ রান করেন তিনি। আর অস্ট্রেলিয়াকেও তুলোধুনো করেন ব্যাট হাতে। কিন্তু এরপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-২০ বিশ্বকাপে দলে নেয়া হয়নি তিনি।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ
টি-২০ বিশ্বকাপে দল থেকে বাদ পড়ায় প্রথমবারের মতো হয়ত ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন শোয়েব মালিক। তবে একই বছর এশিয়া কাপে আবারো ডাক পান তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে সব ফরম্যাটে খেলার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্টে খেলার পরও তৃতীয়টিতে বাদ পড়েন তিনি। এরপর আরো কিছু সময়। অপেক্ষা শেষ হয় ১৩ মাস পর।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবারো ২২ গজে
জিম্বাবুয়োর বিপক্ষে ২০১৫ সালে খেলতে নামেন মালিক। চারটি ম্যাচে মাত্র ৩৪ রান করেন তিনি। ডাক পাওয়ার পর তার ২৩ ইনিংসে তার গড় ছিল ১২.৭৩। ৩০ রানের বেশি করেছেন মাত্র একবার। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে থেকে আবারো বাদ পড়েন তিনি। খেলার সুযোগ পান শুধু টি-২০তে। তবে ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দলে সুযোগ পান। পাঁচটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিল ৯০.৭৬।

২০১৩, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন ম্যাচে মাত্র ২৫ রান করায় আবারো দল থেকে বাদ পড়েন মালিক।

টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০১৪
২০১৩ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটি টি-২০তে খেলার সুযোগ পান মালিক। এরপর আবারো বাদ পড়েন। পরের বছর, ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে আবারো সুযোগ পান। চারটি ম্যাচে ৫২ রান করেন। ফলাফল, আবারো দল থেকে বাদ। এরপর আর এক বছর নয়, আরো একটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাকে।

Shoib Malik-bn

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবারো ডাক
দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে ডাক পেয়েছিলেন শোয়েব মালিক। এবার আবারো সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাক পেলেন তিনি। তবে এবার নিজ দেশে, লাহোরে। দুটি টি-২০তে ১৪ রান করেন মালিক। তবে ওয়ানডে ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন। ২০০৯ সালের পর প্রথম তিন অঙ্কে পৌঁছান তিনি। করেন সেঞ্চুরি, ১১২ রান। এরপর এক থেকে দেড় বছর দলে নিয়মিত ছিলেন মালিক। ত্রিদেশীয় সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে দুর্ধর্ষরুপে দেখা মেলে তার। করেন ২৪৫ রান। সেই ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ৭৪ ইনিংসে গড় ছিল ৫১.৫২। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মালিক।

২০১৯ বিশ্বকাপ, তবে কি সমাপ্তি?
না। বিশ্বকাপের পরও তাকে কয়েক দফা বাদ পড়তে হয়েছে। কারণ তিন ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ৮, ০ এবং ০। অনেকে অবশ্য বলছেন, ওয়ানডে শেষ ম্যাচটি হয়ত তিনি বিশ্বকাপেই খেলেছেন। কিন্তু দলের নতুন নির্বাচক মিসবাহ উল হক নির্বাচিত হওয়ার পরই ভাগ্য সহায় হয় মালিকের। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাক পান তিনি। ক্যারিয়ারের ২১তম বছরের শুরুটা দুর্দান্ত করেছেন তিনি। কে বলেছেন, শোয়েব মালিকের ক্যারিয়ার শেষ?

সূত্র : ক্রিকইনফো

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877