শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন

৩৩ ঘণ্টা পর মারা গেলো ‘মৃত শিশু’টি

৩৩ ঘণ্টা পর মারা গেলো ‘মৃত শিশু’টি

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আব্দুল হালিমের স্ত্রী জিনিয়া খাতুন রোববার সকালে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে আসেন ব্যথার সমস্যা নিয়ে। এ সময় তিনি ২৫ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ক্লিনিকে তিনি যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন সেই চিকিৎসক জিন্নাতুল আরা।

‘মাত্র ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি ছিলো। তবে অনেক ব্যথা আর ফ্লুয়িড বের হচ্ছিলো,’ বিবিসি বাংলাকে জানালেন জিন্নাতুল আরা।

‘এ অবস্থায় আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সির কথা ভেবে আমরা সিজার করতে রাজী হইনি। পরে নরমাল ডেলিভারি হয় সোমবার ভোর চারটার দিকে’।

তিনি বলেন, শিশুটির যখন জন্ম হয় তখন তার ওজন ছিলো মাত্র ৬০০ গ্রাম এবং তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিলো না।

‘দেখে মনে হচ্ছিলো বাচ্চাটি জীবিত নেই। এটি দেখেই তার স্বজনরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তবে আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখি ও প্রায় আধা ঘণ্টা পর তার সাড়া পাই।’

জিন্নাতুল আরা বলেন, ‘এরপর মায়ের সংস্পর্শে দেয়াসহ প্রাথমিক সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর তার সাড়া মেলে। এরপর দ্রুত তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয় এবং তিনি দ্রুততার সাথে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন’।

সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আসাদুর রহমান মানিক বিবিসি বাংলাকে জানান, তিনি সোমবার সকাল ৮/৯টার দিকে শিশুটিকে হাতে পান।

‘তখন তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল ছিলো। শ্বাস নিচ্ছিলো না, তবে হার্ট বিট ছিলো। দ্রুততার সাথে আমরা এখানে যতটুকু ব্যবস্থা আছে তার সবটুকুই নিই,’ জানান ডা. আসাদুর রহমান।

তিনি বলেন, এরপর বাচ্চাটিকে ইনকিউবিটরে দেয়া হয় ও আরও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়।

‘এক পর্যায়ে বাচ্চাটি নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। কিন্তু তার জন্য আরো ভালো চিকিৎসা সুবিধা দরকার ছিলো বিধায় আমরা রাজশাহীতে রেফার করি। তবে তার অভিভাবকেরা রাতে তাতে নিতে রাজী হয়নি’।

ডা. রহমান জানান, আজ সকালে এসে তিনি আবার শিশুটির অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন এবং তাকে দ্রুত রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দেন।

‘পরে শুনলাম বাচ্চাটির অভিভাবকেরা হাসপাতালে না নিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে এবং সেখানেই দুপুরে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি ঠিক যে শিশুটির অবস্থা খুবই জটিল ছিলো। এ ধরণের শিশুর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় উপকরণ চুয়াডাঙ্গায় নেই বলেই আমরা রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম,’ বলছিলেন এই চিকিৎসক।

শিশুটির বাবা আব্দুল হালিম জানান, শিশুটি বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই নেই দেখেই তিনি তার নিজের সিদ্ধান্তেই তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।

‘(বাঁচার) ৯০ ভাগ সম্ভাবনা ছিলো না। আর টাকা পয়সার বিষয় ছিলো। তাই ভাবলাম আগে বাড়ি নিই,’ তিনি বলছিলেন বিবিসিকে।

শিশুটির চাচা বরকত উল্লাহ বিবিসিকে বলেন, তাদের গতকালই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়ার কথা বলা হলেও অর্থনৈতিক কারণে তারা চেয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা হোক।

শেষ পর্যন্ত হাজারহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার পর বেলা একটার দিকে মৃত্যু হয় সোমবার ভোরে জন্ম নেয়া শিশুটির। সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877