বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

ইরানকে ঠেকাতে ইসরাইলি মিসাইল কিনছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানকে ঠেকাতে ইসরাইলি মিসাইল কিনছে যুক্তরাষ্ট্র

স্বদেশ ডেস্ক:

জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মধ্যকার উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ইসরাইল থেকে দূরপাল্লার ‘স্পাইক প্রিসিশন মিসাইল’ কিনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেনারা এটিকে নিজেদের শক্তিশালী অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলোতে ব্যবহার করতে চায়।

ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ভবিষ্যতের অভিযানগুলোতে আরো সফল করতে আপগ্রেশনের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অতি উন্নত এই মিসাইলগুলো কেনার বিষয়টি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন অ্যাপাচি হেলিকপ্টারগুলো থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের টার্গেট ধ্বংস করা সম্ভব। যদিও এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র এখন হেলিকপ্টার থেকে আরো দূরের লক্ষ্য যেমন, শত্রুদের ট্যাংক, বাঙ্কার ও সামরিক দলের ওপর আঘাত হানার সক্ষমতা চায়।

এর আগে ৩ জানুয়ারি ভোরে ইরাকের বাগদাদ শহরের বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো সেই অভিযানে তেহরান সমর্থিত পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেসের (পিএমএফ) উপপ্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারান। সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান।
যক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর (পেন্টাগন) জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে হামলাটি চালানো হয়। অপর দিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।

অবশেষে গত ৮ জানুয়ারি ভোরে দু’টি মার্কিন ঘাঁটিতে সেই হামলা চালায় তারা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, এবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত ও দুই শতাধিক লোক গুরুতর আহত হয়েছে। অবশ্য কোন সেনা নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সামরিক সঙ্ঘাত হবে না। তবে যদি এ ধরনের সঙ্ঘাত হলে বিশ্বের জন্য একটা বিপর্যয়কর অবস্থা নেমে আসবে। গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) মস্কোয় জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত যুদ্ধ শুরু হলে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের নিজেদের দেশ ছেড়ে শুধুমাত্র ইউরোপের দিকে পাড়ি জমাবে তাই নয়, বরং অন্য অঞ্চলেও যাবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুতিন-মারকেল দু’জনই ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতা রক্ষা এবং তা বাস্তবায়নে জোর দেন।

তেহরানের কাছে ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ইরানের পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি এ দুর্ঘটনাকে একটি ‘নাটকীয় ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়া ও জার্মানি আরো আলোচনা করবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পুতিন ও মারকেল দু’জনই বলেন, সিরিয়ায় চলমান সঙ্ঘাত রাজনৈতিক উপায়ে নিরসন করতে হবে। সিরিয়া পুনর্গঠনে সব প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দায়িত্বশীল অংশ নেয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন পুতিন। খুব কমই রাশিয়া সফরে আসেন জার্মান চ্যান্সেলর। সেক্ষেত্রে অ্যাঞ্জেলা মারকেলের এই সফরকে আন্তর্জাতিকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই ধারণা করছেন, জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। অ্যাঞ্জেলা মারকেলের এই সফরে যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা কোনো সাধারণ বিষয় ছিল না। সে কারণে বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো ভেনুতে আলোচনা হতে পারত। কিন্তু তা না হওয়ায় এ সফরকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নয়নের ইঙ্গিত বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
আলজাজিরা জানায়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানের সাথে সামরিক সঙ্ঘাত বিশ্বের শান্তি ও স্থায়িত্ব নষ্ট করবে।

এ সফরে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র উত্তেজনা চলছে। এর প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন আবে। মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ দিনের সফর করবেন আবে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাসাতো ওথতাকা জানিয়েছেন, রোববার সৌদির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আল উলা প্রদেশে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ঘণ্টাব্যাপ বৈঠক করেছেন আবে। সে সময় তারা ওই অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
আবে বলেছেন, ওই অঞ্চলে কোনো ধরনের সামরিক সঙ্ঘাত শুধু ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে হুমকি নয় বরং তার পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকি। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাবে।

জাপান নিশ্চিত করেছে যে, ওই অঞ্চলে মার্কিন জোটে যোগ দিচ্ছে না তারা। টোকিও বুদ্ধিমত্তার সাথে একই সাথে ওয়াশিংটন এবং ইরানের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তেহরানের সাথে দীর্ঘ দিন ধরেই জাপানের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি সফর শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান সফরে যাবেন অ্যাবে। সৌদি আরব সফরকালীন শিনজো অ্যাবে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ধরনের সামরিক সঙ্ঘাত শুধু ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে হুমকি নয়; বরং পুরো বিশ্বে এর কঠিন প্রভাব পড়বে। তাই যুদ্ধ-সঙ্ঘাতে না জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানসহ সংশ্লিষ্ট দেশকে কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাই। সৌদি আরব সফর শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান সফরে যাবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, তেহরানের সাথে দীর্ঘ দিন ধরেই জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো রয়েছে। এ দিকে ওয়াশিংটনের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে টোকিও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ-সঙ্ঘাতের পথ বরাবরই এড়িয়ে চলছে প্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপান।

সূত্র : জেরুসালেম পোস্ট

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877