মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি

অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা। সহজ কথায় মানুষ যদি অনায়াসে তার প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটি কিনতে পারে, তাহলে বলতে হবে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। আমাদের দেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি ধাঁধা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের জোরালো ফিরিস্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকার বলতে চাইছে, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। দেশ দুরন্ত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ সহজে তার নিত্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। সরকারের বক্তব্য ও জনসাধারণের যাপিত জীবনের মধ্যে দুস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার জীবনচিত্র যদি আমরা দেখি, সেখানে পাওয়া যাবে চোখধাঁধানো সব অট্টালিকার সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় দামি দামি গাড়ির ছড়াছড়ি। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের দাম চড়া। মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত এবং অভাবী মানুষের অবস্থা কঠিন। এ অবস্থায় ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ২০১৯ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
ক্যাবের সভাপতি জানান, গত বছরের চেয়ে ঢাকায় সবজির দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দেশী মুরগির দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, দুধের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গরুর গোশত, খাসির গোশত, ডিমসহ নিত্য খাদ্যপণ্যের দাম বিভিন্ন মাত্রায় বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম বেড়েছে আরো অনেক বেশি মাত্রায়। এর মধ্যে পেঁয়াজের দামের উল্লম্ফনের ব্যাপারে আমরা সবাই জানি। বাড়িভাড়া বাড়ার গতি আগের বছরগুলোর মতোই লাগামছাড়া রয়েছে। মধ্যম মানের বাসার ভাড়া বেড়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। বস্তি ও নি¤œ এলাকার ভাড়া আরো বেশি ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্য দিকে, মেস বা গণবসবাসের ভাড়া বেড়েছে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। বিদ্যুতের দাম সরকার ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েছে। সামনে এর দাম আরো বেশি হারে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে ক্যাব। সংস্থাটি জানায়, ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৬ শতাংশ। বিগত বছরগুলোতে কম বেশি এভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এক দশকের হিসাব করলে দেখা যাবে, জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। সে হিসাবে মানুষের আয় বাড়েনি। এমনকি দেশে বিপুল বেকারও রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। অন্যভাবে বললে, মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে গেছে ঢাকায়।
ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে বসবাস নিয়ে পরিবেশগত যে জরিপ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শহরগুলোর সাথে এর তুলনা হচ্ছে। বিশেষ করে এর প্রাকৃতিক পরিবেশের অবস্থা অত্যন্ত নি¤œ। বাতাস ও পানি দূষিত। এর যোগাযোগ অবকাঠামো একেবারেই দুর্বল। এর সাথে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ঢাকা শহরে মানুষের বসবাস অত্যন্ত কঠিন করে তুলছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো সফলতা দেখা যাচ্ছে না। অথচ একশ্রেণীর মানুষের কাছে অঢেল অর্থ রয়েছে। তারা বাজার থেকে দেদার কিনছেও। এই ব্যবস্থা কোনোভাবেই ভারসাম্যপূর্ণ নয়। ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজনীয় পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছে হলেই বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877