আরফাতুন নাবিলা : জীবনে খ্যাতির শীর্ষে থাকা অনেক নারীই প্রাচুর্যের মধ্য দিয়ে জীবন পার করলেও সুখের সন্ধান পাননি। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই পরিণত হয়েছেন রহস্যে। রহস্যময় জীবনের এমনই তিন নারীর কথা লিখেছেন।
প্রিন্সেস ডায়ানা
প্রায় দুই যুগ আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া সুপরিচিত নারী প্রিন্সেস ডায়ানা। জীবিত থাকাকালীন তো বটেই, তার মৃত্যুর পরেও তাকে নিয়ে আগ্রহের কোনো শেষ ছিল না, সম্ভবত এখনো শেষ হয়নি। রাজপরিবারের হাস্যোজ্জ্বল এই বধূ খুব দ্রুত জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্ববাসীর মনে। তাই তো গাড়ি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু আজও এক রহস্য।
নরফোকের বিখ্যাত স্পেনসার পরিবারে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই জন্ম হয় প্রিন্সেস ডায়ানার। পৃথিবীর সুন্দরীতমাদের মাঝে একজনের নাম বললে শীর্ষেই উঠে আসে তার নাম। শুধু রূপ-লাবণ্যেই নয়, ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য, প্রেম আর রাজকীয়তার কিংবদন্তি ছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সী ডায়ানার সঙ্গে ৩২ বছরের প্রিন্স চার্লসের ছিল গভীর প্রণয়। তাদের প্রণয়ের কথা তখন প্রচার মাধ্যমে বেশ সরব। প্রণয়টা পরিণয়ে পরিণত হোক এমনটা চাননি রানী এলিজাবেথ। তবে সব জল্পনা-কল্পনা শেষে তারা ঠিকই বিয়ে করেন। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নববধূ ডায়ানা বিশ্ববাসীকে জানান দেন প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে জুড়ে গেল তার নাম। এখন থেকে তিনি রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। তারা ভূষিত হলেন প্রিন্স ও প্রিন্সেস ওয়েলস পদে। এখানেই হয়তো ডায়ানার জীবননাশের গল্প লেখার শুরু হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই রাজপরিবারে তিনি সুখী নন, প্রেমের বিয়ে হলেও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তিনি বিরোধে জড়িয়ে যাচ্ছেন এমন অনেক গল্প সামনে আসতে থাকে। আরও যুক্ত হতে থাকে ডায়ানার ঘনিষ্ঠদের নাম। এই তালিকায় নাম ছিল ডায়ানার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ব্যারি মান্নাকির নাম। ১৯৮৫ সালে মান্নাকিকে ডায়ানার দেহরক্ষী হিসেবে যুক্ত করে দেওয়ার এক বছর পর আবার সরিয়ে নেওয়া হয়। ধারণা করা হয় ডায়ানার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে জানার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই ঘটনার মাত্র দুই বছর পর ১৯৮৭ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান মান্নাকি।
মান্নাকির পর ডায়ানার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ক হয় ব্রিটেনের পদাতিক বাহিনীর কর্মকর্তা মেজর জেমস হিউইটের সঙ্গে। তালিকায় আরও ছিলেন পাকিস্তানি চিকিৎসক হাসনাত খান, প্রপার্টি কনসাল্ট্যান্ট জেমস গিলবি, মিসরের যুবরাজ দোদি আল ফায়েদের নাম। এদের মধ্যে যুবরাজের সঙ্গে মৃত্যুর আগে সম্পর্ক ছিল ডায়ানার। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে রাজপরিবার তো বটেই পুরো ব্রিটেনের জনগণের মাঝেই একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। তাদের দুজনের ছুটি কাটানোর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মিডিয়ায়। তাদের একসঙ্গে থাকার কথা অল্পস্বল্প ছড়ালেও সেই সময় পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হয়নি। কারণ তার আগেই ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুজনের।
মৃত্যু স্বাভাবিক একটি বিষয় হলেও তাদের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হলো নানা গল্প। মৃত্যুর আগে তাদের গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন তার নাম ছিল হেনরি পল। অনেকের ধারণা তিনি ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার একজন লোক। দুর্ঘটনায় হেনরি এবং দোদির মৃত্যু হলেও হাসপাতালে নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর মারা যান ডায়ানা। জানা যায়, হেনরি মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এই বিষয়টিতেই সন্দেহ ঘনীভূত হয় সবচেয়ে বেশি। রাজপরিবারের বধূর গাড়ি কী করে একজন মাতাল মানুষ চালাচ্ছিলেন তাতেই প্রশ্নের উদ্রেক হয়। মুসলমান কারও সঙ্গে ডায়ানার বিয়ে হবে এমন সম্ভাবনা মেনে নিতে পারেনি রাজপরিবার। তাই নিজেদের আভিজাত্য বাঁচাতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এমন সন্দেহও ছড়িয়েছে। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ডায়ানার আপন বোন লেডি সারাহও যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করেন অনেকে। রাজপরিবারের বধূ হয়েও সুখী ছিলেন না ডায়ানা। তার মৃত্যুও ঘেরা রহস্যের জালে। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও তার মৃত্যু রহস্যের কিনারা হয়নি আজও। বিশ্ববাসীর কাছে সত্যিটা অজানাই রয়ে গেছে।
ডরোথি আরনল্ড
অতীতকালে তারকাদের রঙিন বা সাদাকালো পর্দা কোনোটার সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল না। কারণ সে সময় যে এগুলোর উদ্ভবই হয়নি। সেই সময় বিখ্যাত বলতে জানা হতো রাজপরিবার অথবা বড় ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যদের। এমনই এক বিখ্যাত পারফিউম ব্যবসায়ীয় মেয়ে ছিলেন ডরোথি আরনল্ড। ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খুব স্বাভাবিকভাবেই এত বড় পরিবারের একটি অংশ হওয়ায় উত্তরাধিকারীও ছিলেন। তবে আধুনিক জীবন খুব একটা পছন্দ করতেন না ডরোথি। সাধারণ জীবনই তাকে টানত বেশি। ব্রায়ান মোর কলেজ থেকে সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে তিনি লেখালেখিতে মন দিলেন। তবে সেখানেও সাফল্যের দেখা পেলেন না। তার দুটি লেখা পরপর প্রকাশকদের কাছে বাতিল হলো। ভীষণ ব্যথিত হলেন তিনি। ঠিক এই কারণেই কিনা জানা যায়নি, মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটির একটি রাস্তা থেকে একদম অদৃশ্য হয়ে যান ডরোথি। সেইদিনের পর থেকে আর কখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
১৯১০ সালের ১২ ডিসেম্বর। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার দিন, ডরোথি বাড়ি থেকে বের হন ১১টার দিকে। মাকে বলেন, সামনের দিনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য তিনি গাউন কিনতে যাচ্ছেন। আর তিনি সেদিনের পুরোটাই কেনাকাটায় কাটাবেন। মিসেস আরনল্ড জিজ্ঞেস করেছিলেন ডরোথি কাউকে সঙ্গে নিতে চায় কি না। কিন্তু তিনি না করেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ডরোথি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি মাফলার পরেন। বের হয়ে ডরোথি এলাকার একটি চকোলেটের দোকান থেকে কিছু চকোলেট কেনেন। সেখান থেকে ফিফথ অ্যাভেনিউ অ্যান্ড টুয়েন্টি সেভেনথ স্ট্রিটের ব্রেনটানোস বুকস্টোরে গিয়ে একটি বই কেনেন। দুই দোকানেই দুটি জিনিস তিনি আরনল্ড পরিবারের নামে। সেখান থেকে বের হয়েই তার সঙ্গে দেখা হয় বন্ধু গ্ল্যাডিস কিংয়ের সঙ্গে। শেষবারের মতো ডরোথিকে জীবিত অবস্থায় তিনিই দেখেছিলেন। যেদিন ডরোথি অদৃশ্য হয়ে যান সেদিন তার ব্যবহারে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি কারও। তবে যে পোশাক কেনার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তা তিনি কেনেননি। ধারণা করা হয়, তিনি বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন অথবা যে পরিকল্পনা করেছিলেন সেটিকে বাস্তব রূপ দিতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করছিলেন। ডরোথি নিউ ইয়র্কের বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। তার সঙ্গে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন হলে কারও না কারও চোখে অবশ্যই পড়ত। ঘটনার দিন রাতে যখন ডরোথি বাড়ি ফিরলেন না তখন তার পরিবার থেকে যোগাযোগ করা হলো তার বন্ধুদের সঙ্গে। কেউই তার সন্ধান দিতে পারল না। এমনকি সে সন্ধ্যায়, ডরোথির এক বন্ধু তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়িতে ফোন করলে মিসেস আরনল্ড তাকে জানান, ডরোথির মাথাব্যথা করছে, সে শুয়ে আছে। এই ঘটনা তারা বাইরের কাউকে জানাতে চাননি। এমনকি পুলিশকেও না। শুধু ডাকলেন তাদের ছেলে জনের বন্ধু আইনজীবী কেইথকে। বাড়ি এসে কেইথ ডরোথির পুরো রুম ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। কিন্তু সন্দেহ করার মতোই কিছুই পেল না। ফায়ারপ্লেসে কিছু কাগজের পোড়া অংশ পড়েছিল যদিও সেগুলো পড়ার মতো অবস্থায় ছিল না। তার ঘর থেকে কোনো কিছু হারিয়েও যায়নি যা দেখে বোঝা যায় যে সে পালিয়ে গেছে। তদন্তের স্বার্থে কেইথ বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মর্গেও খোঁজ নিল। সেখানেও মিলল না কিছু। ছয় সপ্তাহ পর ডরোথির পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুলিশ ঘটনাটি জনগণকে জানাতে চাইলে কড়া নিষেধ করেন মিস্টার আরনল্ড। তিন দিন পর তিনি সবাইকে জানানোর অনুমতি দেন। নিখোঁজের খবর জানলেও ডোরোথির কোনো খোঁজ মিলল না। তার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে বেশ কয়েকটি ধারণা করা হলেও সেগুলো নিয়ে কোনো আশার বাণী পাওয়া যায়নি। এর মাঝে একটি ছিল, ডরোথি জুনিয়র গ্রিসকম নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে এনগেজমেন্ট করেছিলেন যেটি তার পরিবার কোনোভাবেই মেনে নেয়নি। তবে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমনকি গ্রিসকম নিজেও ডরোথির হারিয়ে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও কিছুই জানতে পারেননি। তিনিও জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। আরেকটি কথা বলা হয় যে, পরপর দুটি লেখা প্রকাশকদের কাছ থেকে বাতিল হওয়ায় তিনি ভীষণ মুষড়ে পড়েন এবং আত্মহত্যা করেন। কিন্তু কোথাও তার লাশ বা সুইসাইডাল নোট পাওয়া যায়নি। ডরোথির বাবা বিশ্বাস করতেন তার মেয়ে অদৃশ্য হয়নি, বরং সেন্ট্রাল পার্কের কোথাও তাকে হত্যা করা হয়। এই কথারও কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। একটি হাসিখুশি মেয়ে বাড়ি থেকে শপিংয়ের কথা বলে আর কখনো কেন ফিরে এলো না সেই তথ্য আর কোনোদিন জানা যায়নি।
অগাথা ক্রিস্টি
বইপড়ুয়া পাঠকদের কাছে অগাথা ক্রিস্টি খুব পরিচিত একটি নাম। রহস্যজনক উপন্যাস লিখে পাঠকের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এই মানুষটির জীবনের কয়েকটি দিন আজও এক রহস্য। ৮০টি রহস্য উপন্যাসের এই লেখিকাকে এক কথায় বলা হয় ‘দ্য কুইন অফ ক্রাইম’ অর্থাৎ অপরাধ উপন্যাসের রানী বা রহস্য সম্রাজ্ঞী। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর মতে, অগাথা ক্রিস্টি বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের লেখক এবং যে কোনো ধরনের সাহিত্যকর্মের সর্বাধিক বিক্রীত লেখক। এই বিষয়ে তার একমাত্র সমকক্ষ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। অগাথা ক্রিস্টির জন্ম ১৮৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের ডেভনের তুর্কিতে। বিয়ের পর স্বামী-সন্তান, লেখালেখি নিয়ে দিনযাপন করা অগাথার জীবন বদলে যায় ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বরের শুক্রবারের রাতে। সেদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে অগাথার স্বামী তাকে জানান অন্য একজন মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে এবং তিনি অগাথাকে ডিভোর্স দিতে চান। কথাটি শুনে খুব একটা ভাবান্তর হলো না অগাথার। তিনি কিছুটা সময় তার চেয়ারে বসে থাকলেন, ধীর পায়ে ওপরে গেলেন, ঘুমিয়ে থাকা সাত বছরের মেয়েকে আদর করলেন, আবার নিচে নেমে এলেন। এরপর তিনি গাড়ি চালিয়ে সে রাতেই বের হয়ে গেলেন। পরবর্তী ১১ দিন তার কোনো ধরনের খোঁজই কেউ বের করতে পারেনি। হুট করে তার এভাবে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয় চারপাশে। ১ হাজার পুলিশ, ১৫০০০ স্বেচ্ছাসেবক এমনকি তাকে খুঁজতে বিমানও ব্যবহার করা হয়। সে সময়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব উইলিয়াম জনসন পুলিশকে খুব চাপ দিতে থাকেন অগাথাকে খুঁজে বের করার জন্য। তাদের বাইরেও আরও দুজন বিখ্যাত রহস্য লেখক শার্লক হোমসের জনক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, লর্ড পিটার উইমজি সিরিজের জনক ডরোথি এল সেয়ারও তার খোঁজ শুরু করেন। নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে তারা অগাথাকে খুঁজে বের করতে জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার গাড়িটি খুঁজে পেতে পুলিশকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। গিল্ডফোর্ডের কাছে নিউল্যান্ড কর্নারের একটি খাড়া রাস্তায় গাড়িটি খুঁজে পাওয়া গেলেও অগাথার কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। কেউ বুঝতে পারছিলেন না তিনি ঠিক কোন কারণে এভাবে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সে সময় তার ষষ্ঠ উপন্যাস ‘দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরড’ বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছিল। আর তিনি তখন পরিচিত এক নাম। অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন লেখার কাটতি বাড়ানোর জন্যই হয়তো তিনি এমন হারিয়ে যাওয়ার একটি নাটক সাজিয়েছেন। আবার শোনা যাচ্ছিল, অন্য নারীর সঙ্গে প্রেম থাকায় তার স্বামী সাবেক যুদ্ধবিমানের পাইলট আর্ক ক্রিস্টি হয়তো তাকে খুন করেছেন। ১১দিন অদৃশ্য থাকার পর ১৪ ডিসেম্বর তাকে সুস্থভাবে খুঁজে পাওয়া যায় হ্যারোগেটের সোয়ান হাইড্রো (বর্তমান নাম ওল্ড সোয়ান হোটেল) একটি হোটেলে। সেখানে এতদিন ধরে তিনি থেরেসা নীল (স্বামীর প্রেমিকা) নামে অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে কোনো ব্যাগও ছিল না। সেখানে তার পরিচয় ফাঁস হয় এমন কিছুই তিনি করেননি। বব ট্যাপিন নামে হোটেলরই একজন ব্যাঞ্জো বাদক তাকে চিনে ফেলেন। পরে পুলিশে খবর দিলে সঙ্গে সঙ্গে তারা মিস্টার ক্রিস্টিকে-সহ সেখানে চলে আসেন। কিন্তু অগাথার কোনো তাড়াই ছিল না। তাদের হোটেল লাউঞ্জে বসিয়ে তিনি পোশাক বদলাতে চলে যান। বাড়ি ফিরে এলেও মৃত্যু পর্যন্ত সেই ১১ দিন নিয়ে কোনো কথাই কাউকে বলেননি অগাথা। তার স্বামীর মতে, তিনি গাড়ি দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার জীবনকাহিনী নিয়ে লিখেছিলেন লেখক অ্যান্ড্রু নরম্যান। তিনি বলেন, অন্য একজনের নাম পরিচয় নিজে ধারণ করে এবং পত্রিকায় নিজেকেও চিনতে না পারাই বোঝায় তিনি আসলে সাইকোজেনিক অ্যামনেশিয়ায় ভুগছিলেন। তবে তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং কলম ধরেন। তবে স্বামীর সঙ্গে আর বেশিদিন সংসার করা হয়নি তার। ১৯২৮ সালে তাকে ডিভোর্স দিয়ে তিনি বিয়ে করেন আর্কিওলজিস্ট স্যার ম্যাক্স ম্যালোউইনকে। অগাথার জীবনের সেই রহস্যময় ১১ দিন আজও এক রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।