শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

বিলাসী স্বপ্ন সামর্থ্য কম

বিলাসী স্বপ্ন সামর্থ্য কম

অর্থমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তিনি স্বল্প সামর্থ্যরে মধ্যে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বিলাসী এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

এ প্রক্রিয়ায় সম্পদ আহরণের ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়বে। পাশাপাশি, বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী; দিয়েছেন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। প্রবৃদ্ধি গতিশীল করার আশ্বাসও আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরিতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় বাড়াতে বাস্তবায়ন করা হবে নতুন ভ্যাট আইন।

অর্থনীতিবিদরা এ বাজেট প্রসঙ্গে বিভিন্নরকম মত দিয়েছেন। বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এ ধরনের বড় বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দক্ষতার উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার তার নতুন ধারণা, চিন্তাচেতনা ও কর্মসূচি নিয়ে এসেছে বলে মনেহয়নি। এর সবই কিন্তু ধারাবাহিক কর্মসূচি। আমাদের হতাশার জায়গাটা হলো, নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে এগুলোর বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো, সে রকম একটা ব্যবস্থা আমরা লক্ষ্য করিনি। যে সব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে যেমন-২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, সেটা কোন খাতে কীভাবে হবে, ব্যক্তি পর্যায়ে নাকি সরকারিভাবে, গ্রামে নাকি শহরে-তা স্পষ্ট নয়। ব্যাংক কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি কখন বাস্তবায়ন করা হবে তা-ও স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে প্রস্তাবিত এ বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়ে রাজধানীতে আনন্দ মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা আদায় করা সম্ভব নয়। সুতরাং বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন হবে না। তবে বাজেটে বেশকিছু ভালো উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে পেনশন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশের উদ্যোগ, প্রবাসীদের বীমা সুবিধার কথা বলা হয়েছে। যদিও সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং থেকে গতকাল পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের, স্লোগানে রেকর্ড গড়া হিসাবের দলিল হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে প্রবেশ করেন বেলা তিনটার কিছু পরে। হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদে যাওয়া অসুস্থ অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপনার শুরুতেই এক রকম ঝিমিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বিরল দৃষ্টান্ত গড়ে বাজেট পড়তে শুরু করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেটে দেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি আর গতিশীল প্রবৃদ্ধির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, আয়তনে ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়েছে আকাশটাকে। এতে আগামী এক বছরে ব্যয় করা হবে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ও বণ্টনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। পণ্যমূল্যের দাম বাড়ার প্রবণতাকে আটকে রাখতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাংশের মধ্যে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সব প্রান্তের মানুষকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা এ বাজেট। এটি চাপ নয়, বরং স্বস্তি আনবে জনজীবনে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বাড়বে কাজের সুযোগ। এর বাস্তবায়নে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। বেতনভাতা, ভর্তুকি, প্রণোদনাসহ অনুন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে আরও বেশি। বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। তবে বাজেট বড় হলেও আনুপাতিক হারে এবারও এক রকম উপেক্ষিত থাকছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত।

আয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা হয়েছে এক অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রা। রাজস্বকে নতুন বছরে নিতে চাওয়া হয়েছে আরও ওপরে। এবার এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে, এনবিআরকে দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার টার্গেট, যা চলতি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। আয় বাড়াতে বাস্তবায়ন করা হবে নতুন ভ্যাট আইন। কিন্তু এর জটিল হিসাব-নিকাশ কতখানি ইতিবাচক ফল দেবে-এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাজেটে আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থের বড় অংশ আসবে বৈদেশিক সাহায্য থেকে। এক্ষেত্রে বিদেশিদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে ৭৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশে ঋণ নিতে হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ছাড়াও এবার নতুন চমকের মধ্যে রয়েছে প্রবাসী আয়ের ওপর প্রণোদনা, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আয়তন বাড়ানোর মতো বিষয়। থাকছে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও সংস্কার প্রস্তাব।

আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে একটি কমিশন গঠন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা, শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা প্রদান, গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলো অর্থনীতির পাওয়ার হাউস হিসেবে গড়ে তোলা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গল ডিজিট বাস্তবায়নসহ আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিকাশে পাদুকা শিল্প, পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্পসহ সব ধরনের স্থানীয় শিল্পে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করে গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গ্রামের মানুষের কাছে প্রশাসনিক ক্ষমতা পৌঁছে দেওয়া, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার কথাও বলা হয়েছে এবারের বাজেটে। এর বাইরে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষিত বেকারদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ঋণ দেওয়ার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন, নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু, তৈরি পোশাকশিল্পে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগও উপস্থাপন করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এতে ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে ভ্যাটের আওতা। ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু খাতে ভ্যাটের হার কমানো হয়েছে। এক স্তরের পরিবর্তে ৬ স্তরে ভ্যাট আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত চার বছর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়েনি। এবারও তা বহাল থাকছে। এ অবস্থায় অনেক ব্যক্তি করজালে ঢুকে পড়বেন। এভাবে ভ্যাট ও করের জাল বাড়ানো হয়েছে। করের আওতা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকে একে নতুন কর-জালের বাজেট বলে অভিহিত করেছেন। করজাল প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ৪ কোটি নাগরিক মধ্যমআয়ের অন্তর্ভুক্ত। অথচ আয়কর দেন মাত্র ২১ লাখ মানুষ। দ্রুততর সময়ে করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা হবে। অবশিষ্ট নাগরিকদেরও চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করজালের আওতায় আনা হবে।

এ ছাড়া আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় আয়কর অফিস স্থাপন করা হবে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৩১টি কর অঞ্চল রয়েছে। আগামীতে কর অঞ্চল ৬৩টিতে উন্নীত করা হবে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘যাহা চাই, তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না’-প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের বিস্তার দেখে ভোক্তাদের মনে এমন ভাবনার উদ্রেক হয়েছে। দুবছর আগেই নতুন ভ্যাট আইন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোটের বিবেচনায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। সে সময় ব্যবসায়ীরা দুই বছর পর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের আগে দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেটে সম্মতি দেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী গতকাল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতার শুরুতে বলেন, জাতি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। জাতীয় জীবনে এটি একটি ঐতিহাসিক দুর্লভ মুহূর্ত। সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণমুখী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে দিনবদলের সনদ রূপকল্প-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা’ জাতির কাছে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিতা ২ লাখ মা-বোন এবং অন্যান্য শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে রাষ্ট্রপতির গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন।

বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন বিরোধীদলীয় নেতা এইচএম এরশাদ। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদের অতিথি গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তব্য শোনেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও সংসদ ভবনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী অনেক বিষয় নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন। তরুণদের ব্যবসার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। এ ছাড়া বৈধপথে রেমিট্যান্স আনার জন্য আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা রাখা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

সঞ্চয়পত্র কেনা-বেচায় আধুনিকায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের গ্রুপ বীমার আওতায় আনতে সমন্বিত বীমা ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে শিগগির ইউনিভার্সেল পেনশন অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। করপোরেট করহারও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। পুঁজিবাজারে করমুক্ত লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আবাসন খাতে নিবন্ধন ফি এবং স্ট্যাম্প ফি হ্রাস করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট পরিসংখ্যান : আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে তা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা করা হয়।

আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর, এনবিআরবহির্ভূত কর, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ও সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান মিলিয়ে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। পরে এটি করা হয় ১ লাখ ২৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877