স্বদেশ ডেস্ক:
বরগুনা সরকারি কলেজ বরিশাল বিভাগের একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই কলেজেই ভর্তি হন বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় বরগুনার পাথরঘাটা তাছলিমা মেমেরিয়াল একাডেমি থেকে এসএসসি’তে বিজ্ঞান বিভাগে ৩.৮৩ পাওয়া ছাত্রী তাহিরা আক্তার।
তাহিরা অক্তার জানান, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ফল বিভ্রাটের কারণে শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে গেল আমার মূল্যবান একটি বছর। আমার বিশ্বাস হয় না এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন ভুল হতে পারে। এইচএসসি ফলাফল প্রকাশের কিছুদিন আগে বাবা-মা তাদের পছন্দের পাত্রের কাছে আমাকে বিয়ে দেন। পরিক্ষার ফলাফলে শ্বশুর বাড়িসহ নিজের পাড়া মহল্লার এবং সহপাঠী মহলে নানা তিরস্কারের শিকার হতে হয়েছে আমাকে। আমার বিশ্বাস ছিল আমি পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবো। কিন্তু বোর্ডের ভুলের কারণে এখন আর তার সুযোগ নেই। আমার এ ক্ষতি পুরণ দিবে কে? কেন আমার সমাজের কাছে অপদাস্ত হতে হলো, এ দায়ভার কার?
তাহিরা আক্তার পাথরঘাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন খান তুরুর মেয়ে ও যমুনা টেলিভিশন বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ফেদৌস খান ইমনের ছোট বোন।
তাহিরার ভাই ফেরদৌস খান ইমন বলেন, এইচএসসিতে ঢাকা মাইলস্টোন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে চান্স পেয়ে ক্লাস শুরু করে আমার বোন। এরপর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারত নিয়ে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়। পরে ঢাকার ওই কলেজ থেকে ট্রান্সফার করে বরগুনা সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ১৭ জুলাই এইচএসসি’র ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফল প্রকাশের দিন দুপুরে সরকারি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তাহিরা জানতে পারে জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতসহ ৩টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এইচএসসি’তে ভালো ফল করার জন্য বিজ্ঞান বিভাগের সবগুলো এবং ইংরেজী বিষয়ে প্রাইভেট পড়ে তাহিরা। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এইচএসসি’র সবগুলো বিষয় ভালোভাবেই পরীক্ষা দেয়। আশা ছিল ভালো ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। এজন্য তাহিরাকে ঢাকায় বাসা রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ও করিয়েছি।
তাহিরার মা সেলিনা খানম বলেন, ৪ মাস পর ২০২০ সালের পরিক্ষায় অংশগ্রহণে জন্য ফরম পূরণ করবে বলে আমার কথা মতো কনফার্ম হওয়ার জন্য মনের ভেতর লজ্জা নিয়ে এইচএসসি’র মার্কশিট উত্তোলন করে তাহিরা। তখনই দেখতে পায় সে কোনো বিষয়েই অকৃতকার্য হয়নি। বরং জিপিএ-৩.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে তাহিরার রোল নম্বর দিয়ে এখনও টেলিটক এর মাধ্যমে খুদেবার্তা দিলে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে বলে দেখাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের সবগুলো পরীক্ষা ভালো হয়েছিলো। সে এ প্লাস পাবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু ফল দেখে পুরো পরিবার খুবই হতাশ হই। এই অপূরণীয় ক্ষতির জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি চান তাহিরার মা। এজন্য তারা আইনের সহায়তা নিবেন বলেও জানান।