স্বদেশ ডেস্ক: ভারপ্রাপ্ত খতিব দিয়ে চলছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। খতিব প্রফেসর মাওলানা সালাহউদ্দিন অসুস্থ হওয়ায় গত সাড়ে চার বছর সিনিয়র পেশ ইমাম ও পেশ ইমামরা খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ওপর পরিচালিত সরকারি নিরীক্ষায় অনুমোদিতভাবে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় বেতনভাতা পরিশোধের বিষয়ে আপত্তি ওঠার পর নতুন খতিব নিয়োগ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
খতিবের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান, পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী, মাওলানা মুহাম্মদ এহসানুল হক ও মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম বায়তুল মোকাররমে জুমার খুতবা দিয়ে আসছেন।
জুমার খুতবায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় ইস্যুতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের কারণে দেশের প্রধান এই মসজিদের খতিবের পদটি বেশ মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর আগে ১৯৮৪ সাল থেকে ২৪ বছর টানা খতিবের দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক। ২০০৭ সালে খতিব থাকাবস্থায় রমজান মাসে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন। দিকনির্দেশনামূলক খুতবার জন্য তিনি জাতীয় খতিব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার খুতবা শোনার জন্য শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়তে আসতেন।
তার মৃত্যুর পর সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা নূর উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি খতিব হিসেবে নিয়োগ পান মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল, মহাখালী মসজিদে গাউসুল আজমের খতিব প্রফেসর মাওলানা সালাহউদ্দিন। তিনি ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে একই মাদরাসার হেড মাওলানা হিসেবে তিনি বিদায় নেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, খতিব প্রফেসর মাওলানা সালাহউদ্দিন চিকিৎসার জন্য ভারত গমনের উদ্দেশে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪৫ দিনের ছুটি নেয়ার পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং তিনি এরপর আর কোনো খুতবা দেননি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও খতিবের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা সালাহউদ্দিন দীর্ঘ দিন ধরে হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী। তারপক্ষে স্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
২০০৯ সালে তার নিয়োগের পর পক্ষে-বিপক্ষে বায়তুল মোকাররমে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তখনকার সিনিয়র পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা নূর উদ্দিনকে খতিব করার দাবিও ওঠে। এ নিয়ে পর পর কয়েক জুমার নামাজে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে মাওলানা সালাহউদ্দিন খুতবা দেয়া অব্যাহত রাখলে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে শান্ত হয়। অবশ্য কওমি আলেমদের বড় একটি অংশ তখন থেকে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ বর্জন করে আসছিলেন।
সিভিল অডিট অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাড়ে চার বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও খতিব সালাহউদ্দিনের বেতন ভাতা বাবদ ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্মারকে তিনি ১/১/২০০৯ সালে খতিব হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি গত ১৪/০৭/২০১৯ তারিখে উন্নত চিকিৎসার জন ভারত গমনের উদ্দেশ্যে এক মাস ছুটির আবেদন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক তাকে ১৫/০৯/২০১৫ থেকে ২৯/১০/২০১৫ পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেন। সে হিসেবে তিনি ৩০/১০/১৫ তারিখে ছুটি শেষে কাজে যোগ দেয়ার কথা। কিন্তু ছুটির পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে তাকে নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, চিকিৎসা শেষে খতিব যথারীতি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় খুতবা প্রদান থেকে বিরত রয়েছেন। কিন্তু তার সার্বিক নিকনির্দেশনায় সিনিয়র পেশ ইমাম ও পেশ ইমামগণ খুতবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছেন। নিরীক্ষা প্রতিবেদনেজবাবকে স্বীকৃতিমূলক আখ্যায়িত করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। বলা হয়েছে দায়িত্ব পালন না করে বা অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে সরকারি বেতন ভাতা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাওলানা সালাহউদ্দিনের অসুস্থতার কারণে ২০১৬ সালেই নতুন খতিব নিয়োগ দেয়ার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায়ও এসেছিল। তখন নতুন খতিব নিয়োগের ব্যাপারে কোনো কোনো মহল থেকে আপত্তি তুলে বলা হয়, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খতিবগণ আমৃত্যু খতিব থাকার রেওয়াজ রয়েছে। ফলে বর্তমান খতিব জীবিত থাকাবস্থায় নতুন খতিব নিয়োগ দেয়া ঠিক হবে না। তবে এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগবিধিতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সর্বশেষ সরকারি নিরীক্ষায়ও বিষয়টি আসার পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নতুন খতিব নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। নতুন বছরের শুরুতে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।
জানা যায়, এর আগে মুফতি সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান ১৯৬৪-৭৪ সাল পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর খতিব হন মুফতি মাওলানা আবদুল মুইজ (রহ.)। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪-৮৪ সাল পর্যন্ত। এরপর দায়িত্বে আসেন খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)। ১৯৮৪-২০০৭ সাল দীর্ঘ ২৪ বছর তিনি খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।