বেশ কিছু দিন ধরেই মাদ্রাসাছাত্র শাহাপরানকে (১১) বলাৎকারের চেষ্টা করে আসছিলেন তার শিক্ষক হাফিজুর রহমান। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে নতুন কৌশল আঁটেন। বেড়ানোর কথা বলে গত ৩১ মে শাহাপরানকে হাফিজুরের বাড়ি শার্শার গোগা গ্রামে নিয়ে যান।
পরে তাকে নিজ ঘরে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ খাটের নিচে ঢুকিয়ে ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যান। ১১ দিন পর অবশেষে গ্রেপ্তার হন তিনি। পুলিশ জানায়, বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে আক্রোশ থেকে শাহাপরানকে খুন করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন শিক্ষক হাফিজুর।
গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় শার্শা থানাপুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ও হত্যারহস্য প্রকাশ করে। এর আগে গতকাল ভোরে খুলনা জেলার দীঘলিয়া উপজেলার একটি কওমি মাদ্রাসার ভেতর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আসামি হাফিজুর বেনাপোলের কাগজপুকুর খেদাপাড়া হেফজুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। হত্যার শিকার কাগজপুকুর গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হাফিজুর একই মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।
শার্শার নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান সংবাদ সম্মেলনে জানান, অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক হাফিজুরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ছাত্র শাহাপরানকে বলাৎকারের চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে আক্রোশ মেটাতে শাহাপনারকে বেড়ানোর কথা বলে গত ৩১ মে তার (শিক্ষক) গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাকে নিজ ঘরে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ খাটের নিচে ঢুকিয়ে ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যান। তিন দিন পর ওই ঘর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
সহকারী পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করলেও বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন হাফিজুর। অবশেষে বুধবার ভোরে দীঘলিয়া উপজেলার একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে এ হত্যাকা-ের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছে শাহাপরানের পরিবার। তার বাবা শাহাজান আলী বলেন, সততা আর আদর্শ নিয়ে মানুষ হবে- এমন স্বপ্নে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্ন ওই শিক্ষকের লালসার কাছে ভূলণ্ঠিত হয়ে গেছে।
আর কোনো শিশুকে যেন এমনভাবে জীবন দিতে না হয়- এ জন্য উপযুক্ত বিচার চাইছি। অন্যদিকে শিক্ষক হাফিজুরকে গ্রেপ্তারের আগে তার আত্মীয়স্বজনদের আটক করে কয়েক পুলিশ সদস্য বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন- এ রকম গুঞ্জন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রশ্নে সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, আমিও শুনেছি। কিন্তু যাদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল, তাদের আমি ডেকে জিজ্ঞাসা করলে এর কোনো সত্যতা মেলেনি।