মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন

পিডিবির পরিচালন ব্যয় এক বছরে বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা

পিডিবির পরিচালন ব্যয় এক বছরে বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পরিচালন ব্যয় এক বছরে বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সেই সাথে বাড়ছে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সামগ্রিক ব্যয়। এ জন্য দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, পিডিবির উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এতে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। আর এ অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের ঘাড়ে।

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক বিডি রহমত উল্লাহ বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পিডিবির হিসাব মতে, ৬২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গ্যাসের মাধ্যমে। এতে পিডিবির সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কোনোক্রমেই সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকার ওপরে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকে বিদ্যুতের মূল্য নেয়া হচ্ছে ১৩ টাকার ওপরে। আর গড়ে মূল্য নেয়া হচ্ছে প্রায় ৭ টাকা। এ তিন টাকা ব্যবধানের প্রধান কারণ হলো অযৌক্তিক ব্যয় বাড়ানো। তিনি জানান, সরকারের দাবি অনুযায়ী বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ গড়ে আট হাজার মেগাওয়াটের বেশি হচ্ছে না। এতে দেখা যায়, উৎপাদন ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ বিতরণ করতে হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। আর এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশির ভাগই বেসরকারি পর্যায়ের উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎকেন্দ্র। দায়মুক্তি দিয়ে টেন্ডার ছাড়াই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কোনোভাবেই বুঝে আসে না, যেখানে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়া যাচ্ছে না, এর ওপর কেন নতুন করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। আর এভাবে কেনই বা ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।’ এর ফলে পিডিবির অযৌক্তিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এ অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জনগণের ঘাড়ে বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
পিডিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই বসিয়ে রাখা হচ্ছে। বিপরীতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। আবার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ না করে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। বিপরীতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি মূল্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। এভাবে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

পিডিবির এক হিসাব মতে, নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে পিডিবির পরিচালন ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, আগামী বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) এ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। আর মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেশি। সেই সাথে এক বছরে জনবল ব্যয় বাড়বে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। যেমন নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে জনবল ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭১০ কোটি টাকা। আগামী বছরের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে চার হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পিডিবির ঘাটতি বেড়ে যাবে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে; অন্যথায় লোকসান আরো বেড়ে যাবে।

এরই মধ্যে পিডিবির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিইআরসির গণশুনানিতে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল। যেমন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। অপচয়, চুরি ও দুর্নীতি বন্ধ করা হলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন হবে না। পিডিবি আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বিইআরসি বিবেচনায় নিলে আগামী মাস থেকেই গ্রাহকের ঘাড়ে নতুন বিদ্যুৎ মূল্য চাপবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877