মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

চাঁদা না দেয়ায় গুঁড়িয়ে দেয়া হলো প্রবাসীর নির্মাণাধীন ভবন

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

স্বদেশ ডেস্ক: কিশোরগঞ্জ : কুলিয়ারচরে নিজেদের ক্রয় করা জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে চাঁদা না দেয়ায় মামলা-হয়রানির শিকার হচ্ছে একটি প্রবাসী পরিবার। প্রভাবশালী মহলটির দায়ের করা মিথ্যা মামলায় পরিবারের এক সদস্য সিঙ্গাপুর প্রবাসী মো. শাহাদত মিয়া গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একই মামলার আসামি হয়ে ফেরারি জীবনযাপন করছেন শাহাদতের দুই ভাই কুয়েত প্রবাসী কাউসার মিয়া ও দুবাই ফেরত আরশ মিয়া। মামলা আর হয়রানিতে কাবু করেও ক্ষান্ত হয়নি প্রভাবশালী মহলটি। তারা প্রবাসী পরিবারটির নির্মাণাধীন বহুতল ভবনটির পিলার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া ছাড়াও সিমেন্ট-রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের পরও পুলিশ আসামিদের ধরছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামের বাড়িতে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন গৃহকর্তা বয়োবৃদ্ধ মুছলিম মিয়াসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা। সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নিজেদের এমন অসহায়ত্বের বর্ণনা দেন গৃহকর্তা মুছলিম মিয়া ও তার মেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের শিক্ষার্থী তাজমিন তাবাসসুম।
তারা জানান, মুছলিম মিয়ার চার ছেলে ও এক মেয়ে।
চার ছেলের মধ্যে সবার বড় কাউসার মিয়া কুয়েত প্রবাসী, আরশ মিয়া কুয়েত ফেরত বর্তমানে ঢাকায় পাদুকা ব্যবসা করেন, শাহাদত হোসেন ও ছোট ছেলে মোশারফ সিঙ্গাপুর প্রবাসী। একমাত্র মেয়ে তাজমিন তাবাসসুম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ছেন। ধোপাখালী গ্রামের বাড়ির জায়গার পরিমাপ কম হওয়ায় পারিবারিক উদ্যোগে পার্শ্ববর্তী নাসিরাকান্দা এলাকায় বাড়ি করার জন্য ৩১ শতাংশ জায়গা ক্রয় করা হয়। সেই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য কুয়েত প্রবাসী কাউসার মিয়া ও সিঙ্গাপুর প্রবাসী শাহাদত হোসেন কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেন। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে চারতলা ভবনের কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় মঞ্জু মিয়া নামে এক প্রভাবশালী মুছলিম মিয়ার কাছে সম্মানীর কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু মুছলিম মিয়া চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মুছলিম মিয়া ক্ষিপ্ত হন। গত ২২শে নভেম্বর মধ্যরাতে মঞ্জু মিয়ার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে তাদের বেশ কয়েকজনকে আহত করলে এ ঘটনায় গত ২৪শে নভেম্বর থানায় দায়ের করা মামলায় পূর্বের ক্ষোভ থেকে কাল্পনিকভাবে মুছলিম মিয়ার তিন ছেলে কুয়েত প্রবাসী কাউসার মিয়া, সিঙ্গাপুর প্রবাসী মো. শাহাদত মিয়া ও পাদুকা ব্যবসায়ী আরশ মিয়াকে আসামি করা হয়। ওইদিনই নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকদের কাজ তদারকিতে থাকা শাহাদত মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ২৫শে নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে মামলার অপর দুই আসামি শাহাদতের দুই ভাই কাউসার মিয়া ও আরশ মিয়া আত্মগোপনে চলে যান। তিন ভাইয়ের অনুপস্থিতির সুযোগে গত ২৯শে নভেম্বর দিবাগত রাতে মঞ্জু মিয়া ও তার লোকজন নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের জায়গায় গিয়ে তাণ্ডব চালান। বহুতল ভবনের পিলার ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ভবনের কাজ করার জন্য নির্মাণ করা অস্থায়ী টিনের ঘরটিও ভাঙচুর করা হয়। আড়াই-তিন ঘণ্টা তাণ্ডব শেষে ট্রলিভর্তি করে সিমেন্ট-রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় তাণ্ডবকারীরা। এ ব্যাপারে গত ৫ই ডিসেম্বর মুছলিম মিয়ার মেয়ে তাজমিন তাবাসসুম বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় মামলা দায়ের করলেও অজ্ঞাত কারণে আসামি ধরছে না পুলিশ। এরপর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালী মহলটি। এ অবস্থায় বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ