বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

নতুন বাজেটের দিকে তাকিয়ে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা

নতুন বাজেটের দিকে তাকিয়ে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা

অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে ২০১০ সালের পর থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি। তাই বেসরকারি প্রাইমারি, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এবার তাকিয়ে আছেন নতুন বাজেটের দিকে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই জাতীয়করণের দাবি তাদের।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট, যেখানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুখবর আসছে বলে জানা গেছে। আর এ খাতে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নন-এমপিও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।

সে অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের আগে গত বছর এমপিও নীতিমালা-২০১৮ চূড়ান্ত করে প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। এমপিওর জন্য প্রায় সাড়ে নয় হাজার আবেদন জমা পড়ে অনলাইনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বাছাইয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের খরচ হবে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫০০ কোটি টাকা। সে জন্যই আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষকদের সব দাবি পূরণ হবেÑ এমনটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। কারণ সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তা ছাড়া এর চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। এর পরও সরকার চেষ্টা করছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির। তবে সাধ্যমতো চেষ্টা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আছে কিছু ইস্যুতে। এগুলো বাজেটে গুরুত্ব পাবে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিওভুক্তি : স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর অপেক্ষায় আছেন। তাদের ফোরাম ‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন’-এর সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা নতুন অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্তির সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই। কারণ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক-কর্মচারী ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনাবেতনে চাকরি করছেন। এর মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স আছে মাত্র ৫ থেকে ৭ বছর। তাই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সবাইকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

তিনি বলেন, ‘এত বছর পর কোনোক্রমেই আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সমীচীন হবে না। স্বীকৃতপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে অসুস্থ প্রতিযোগিতার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে। এর সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়বেন। তাই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির একটি সামগ্রিক স্বচ্ছ সমাধান প্রত্যাশা করি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান বাজেটে অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট না হলে আমরা কম বেতন নিতেও রাজি আছি। পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরে বেতন সম্পন্ন করা হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের দাবি, সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে।’

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি : শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করাসহ ১৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের চাকরির ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য দূর করতে এবং শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। বাজেট সামনে রেখে আমাদের দাবি হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। তবেই শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধায় বৈষম্য দূর হবে।’

বেরসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : জাতীয়করণবঞ্চিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমিতি।

সংগঠনের সভাপতি মো. মামুনূর রশিদ খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের মধ্যে থেকেই বাদ পড়া ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করতে হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই। ২০১২ সালের ২৭ মে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করণের ঘোষণার সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে এগুলো জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বাজেট উপস্থাপনের পর আগামী ১৬ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877