মাওলানা দৌলত আলী খান:
ইসলামে সীমার অতিরিক্ত বিলাস জীবন কাম্য নয়। সাদাসিধা জীবনই ইসলাম সমর্থন করে। বিলাসিতা মোমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতিকে দূরিভূত করে দেয়। ফলে মোমিনরা অন্যায় বা গোনাহ করতে দ্বিধা করে না। ইবাদতের শখ হারিয়ে ফেলে। এমনকি দ্বীনবিরোধী কার্যকলাপই নিজের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। এভাবে দুনিয়ার বিলাসিতা জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নবীজি (সা.) দুনিয়ার বিলাসিতাকে সর্বদা প্রত্যাখ্যান করেই চলেছেন। আর স্বীয় উম্মতদের বিলাস জীবন পরিহার করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) যখন তাকে ইয়ামেন দেশে পাঠালেন তখন তাকে বললেন, তুমি বিলাসিতা থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার খাঁটি বান্দারা বিলাসী জীবনযাপন করেন না। (আহমদ)।
আর সাধারণত মোমিনদের অল্পতে তুষ্ট থাকা উচিত। কারণ, পার্থিব জীবনে সবকিছুর পরিপূর্ণতা সম্ভব হয় না। যারা দুনিয়ার জীবনে সব পেতে চায় তারা মূলত কিছুই পায় না। এ স্বভাবের লোক দুশ্চিন্তার বোঝা নিয়ে জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছেও সফল হয় না। তাই অল্পতে তুষ্ট থাকাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এটিই হলো নবীজি (সা.) ও সাহাবাদের অনুপম আদর্শ। এ আদর্শ গ্রহণ করলে কোনো মোমিনকে দুনিয়ার জীবনে মানসিক দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হতে হবে না। প্রয়োজনের সীমানা পেরিয়ে অতি লোভ করা কোনো মোমিনের আদর্শ হতে পারে না। যে ব্যক্তি অল্পতে তুষ্ট হবে, তার অল্প ইবাদতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। তাই মোমিনকে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যদিও তা অল্প হয়। হাদিসে আছে, হজরত মিকদাম বিন মায়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছিÑ কোনো ব্যক্তি তার পেট অপেক্ষা মন্দ কোনো পাত্রকে ভর্তি করেনি। আদম সন্তানের জন্য এই পরিমাণ কয়েক লোকমাই যথেষ্ট যা দ্বারা সে নিজের কোমরকে সোজা রাখতে পারে। যদি এর অধিক খাওয়া প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং অপর তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে। (তিরমিজি : ২৫৫৪; ইবনে মাজাহ : ৩৪৭৪)।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি অল্প রিজিকে পরিতৃপ্ত ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ তায়ালা তার অল্প আমলে সন্তুষ্ট হন। (বায়হাকি)।