আজকের লেখার শিরোনামটি সাবেক ইতালীয় কূটনীতিক মার্কো কার্নেলসের এক লেখা থেকে নেয়া। তাকে সোমালিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও জাতিসঙ্ঘে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কার্নেলস ১৯৯৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিদেশ নীতিমালার বিশেষজ্ঞ হিসেবে সহায়তা করেন তিনজন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রীকে। সম্প্রতি তিনি ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে, সিরিয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া সমন্বয়কারী বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন। ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইরাকে ইতালির রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সঙ্গত কারণেই মধ্যপ্রাচ্য এবং সেখানে পশ্চিমা স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তিনি বিশেষভাবে অবহিত।
মার্কো কার্নেলস লেখাটি লিখেছেন সম্প্রতি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দানের পরিপ্রেক্ষিতে। মিসরে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ড. মোহাম্মদ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বসা, আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প এই নির্দেশ দেন। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এই প্রক্রিয়ার পক্ষে মত দেয়নি। ফলে এই উদ্যোগ এখন অনেকটা থমকে রয়েছে।
মার্কো কার্নেলসের মতো অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এ অঞ্চলের পরিস্থিতিকে গঠনমূলকভাবে মোকাবেলা করতে চায়, তবে দেশটিকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে ‘রাজনৈতিক’ ইসলামের সাথে যুক্ত হতে হবে। কিন্তু ওয়াশিংটন দুই দশক ধরে কয়েকটি সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে তার নীতি পরিচালনা করছে। আর এই নীতির ব্যাপারে মর্ফির সেই বিখ্যাত তত্ত্বটি প্রযোজ্য বিশেষভাবে। মর্ফির মতে, ‘একটি ভুল ভিত্তি বা সিদ্ধান্তের ওপর দাঁড়িয়ে যা কিছু করা হোক না কেন, তার সবটা ভুলই হবে।’
মার্কোর মতে, ওয়াশিংটনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ক্ষেত্রে মর্ফির থিওরিরই বাস্তবায়ন চলছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘শুধু সাম্প্রতিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের কাজের দিকে তাকান। বিল ক্লিনটন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে হ-য-ব-র-ল করে ফেলেন আর দোষারোপ করেন সাবেক ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে। ২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকে আগ্রাসী হামলা চালিয়েছেন। বারাক ওবামা স্ব^ীকার করেন, ২০১১ সালের বিদ্রোহের পর তিনি লিবিয়ায় ‘শিট শো’ করেছিলেন। সবাইকে ছাড়িয়ে এযাবৎকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মর্ফির আইনটি পুরো বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি ইরানের পারমাণবিক চুুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আরোপ করেন, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন, দখলকৃত গোলান হাইটসের ওপর ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের বৈধতা দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য তহবিল বাতিল করে মর্ফির আইন ষোলকলায় পূর্ণ করেছেন।’
মুসলিম ব্রাদারহুড, বিশ্বে রাজনৈতিক ইসলাম (ইসলামিক আন্দোলনকে পশ্চিমারা এই নামেই চিহ্নিত করে থাকে) প্রচারের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি, মধ্যপ্রাচ্যের সমসাময়িক ইতিহাসে যার বিশাল প্রভাব রয়েছে। এ দলটি প্রায় এক শতাব্দী আগে মিসরীয় শিক্ষাবিদ ও সংগঠক হাসান আল বান্নার উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন নামে সংগঠনটি বিস্তৃত। এটি মিসর, সিরিয়া ও ইরাকে ব্রিটিশ এবং বাথ পার্টির শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ইরানি বিপ্লবকেও এটি প্রভাবিত করেছিল বলে মনে করা হয়।
ব্রাদারহুডকে অনেক আরব সরকার ভয় পায় এই কারণে যে, দলটি ক্ষমতার নিচ থেকে ঊর্ধ্বমুখী গমন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ সরকার রাজতন্ত্রের অথবা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের ভোটাধিকার ক্ষমতা নির্ধারণ করার অর্থ হলো, ওপর থেকে চেপে বসা ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা। এই চ্যালেঞ্জের কারণে বারবার মুসলিম ব্রাদারহুডকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এর সামাজিক ভিত্তির কারণে এটি তার নিজস্ব ভূমিকায় ফিরে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি আরব বসন্তের প্রধান নির্ণায়ক শক্তি ছিল আর অনিচ্ছাকৃত সুবিধাভোগীর মধ্যে একটিতে পরিণত হয় দলটি। তিউনিসিয়ায় এর ফলাফল হয় ইতিবাচক এবং সিরিয়ায় ঘটে গেছে দুঃখজনক ঘটনা।
ইসলামী আইন এবং জনগণের ইচ্ছার জটিল সংযোজন ঘটানোর কারণে ব্রাদারহুডকে অনেক আঞ্চলিক একনায়ক সরকার নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে। তার অস্থির ইতিহাসের পরও ব্রাদারহুড পাশ্চাত্যের আধুনিকতা ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সমন্বয় করে ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে। কট্টরবাদীরা এটিকে ব্রাদারহুডের আপস হিসেবে দেখে আর মধ্যপন্থীরা যুক্তিগ্রাহ্য উদারতা হিসেবে মূল্যায়ন করে।
কিন্তু আরব বিশ্বের ক্ষেত্রে মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। কথিত ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট) জনগণের ইচ্ছাকে তখনই কেবল গ্রহণ করবে, যদি তারা ‘সঠিক নেতা’ নির্বাচন করে। মধ্যপ্রাচ্যে এর মানে হলো, যেসব নেতা পশ্চিমা জগতের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন, যারা ইসরাইলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ইরানের প্রতি সমালোচনামূলক তারাই ‘সঠিক নেতা’। দুর্ভাগ্যক্রমে, ব্রাদারহুড এই ‘ক্লাবে’ ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসগুলোতে যখন মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরে ক্ষমতায় ছিল, তখন দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভ্রান্ত সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য পরিণতির মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কেসস্টাডি হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষমতায় থাকার এই এক বছরে ব্রাদারহুড সম্ভবত মিসরের সরকারি অফিসের দেয়াল থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারকের প্রতিকৃতিগুলোকে সরিয়ে দেয়ার জন্যও যথেষ্ট সময় পায়নি। তবুও আগের শাসক অভিজাতদের দুর্নীতি ও ক্ষোভের দীর্ঘতর উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মিসরের বিপর্যয়মূলক অবস্থার জন্য এই গোষ্ঠীটিকে দায়ী করা হয়েছে।
মার্কো কার্নেলসের মতে, যদিও ইসলামের কিছু মৌলবাদী গ্রুপ এক সময় ব্রাদারহুডের মতাদর্শের সাথে যুক্ত ছিল, তবুও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাশ্চাত্যের মনে রাখা উচিত : প্রথমত, এই গ্রুপটি পশ্চিমা নির্বাচনী নিয়মগুলো মেনে নিয়ে খেলতে সম্মত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সহিংসতা থেকে তারা দূরত্ব বজায় রেখেছে। তৃতীয়ত, খোলাখুলিভাবে আলকায়েদা এবং আইএসের মতো সত্যিকারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দোষারোপ করেছে। কোনো পশ্চিমা সরকারই বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনাকে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ইচ্ছা দেখায়নি এবং সে অনুযায়ী কাজ করতেও ইচ্ছা প্রকাশ করেনি।
এর ফলে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ যদি আবার সামনে আসে, তাহলে মুসলিম ব্রাদারহুড ২০১২-১৩ সালের নেতিবাচক মিসরীয় অভিজ্ঞতার দ্বারা ভীত হতে পারে। তা ছাড়া, ইরানি মডেল অনুসরণ করে, বিপ্লবী গার্ডগুলোর মতো একটি শক্তি সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভিন্নভাবে আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তারা সমর্থন করতে পারে। এতে ইসলাম ও পশ্চিমের মধ্যে আরো ইতিবাচক সহযোগিতা সৃষ্টির মতো সুযোগ কার্যত নষ্ট হয়ে যাবে।
মার্কোর মতো পাশ্চাত্যের অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ইসলামের সাথে গঠনমূলকভাবে আচরণ করতে আগ্রহী হয়, যদি সত্যিকার অর্থে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের দিকে তাকাতে চায়, তবে একটি অপরিহার্য বিকল্প হলোÑ ক্ষমতা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে আগ্রহী কিছু আরব একনায়ক সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট পরামর্শ উপেক্ষা করে ব্রাদারহুডকে গুরুত্ব সহকারে সম্পৃক্ত করা। রাজনৈতিক ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত না হয়েই মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের সাথে একটি গুরুতর, গঠনমূলক ও টেকসই রাজনৈতিক যোগসূত্র তৈরি করা সম্ভব মনে করা অবাস্তব।
ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের মতো আমেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্কও মনে করছে, পশ্চিমা দেশগুলো ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎটি মূলত অভিন্ন স্বার্থ এবং লক্ষ্য অর্জনে অহিংস ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে তারা কোন মাত্রায় ব্যাপকভিত্তিক সংলাপে নিয়োজিত হবে, তার ওপর নির্ভর করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং জটিল পরিষেবাগুলো প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামিস্টদেরকেই একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখা হয়।
ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের নীতিগবেষকেরা মনে করেন, বিশ্বাসের পরিবর্তে আচরণের ওপর পাশ্চাত্যের আরো ঘনিষ্ঠভাবে মনোযোগ দেয়া উচিত যা বুঝতে সাহায্য করবে যে, কখন, কিভাবে এবং কেন ইসলামপন্থীরা মধ্যপন্থী এবং কেন তারা কিছু রাজনৈতিক কৌশল পছন্দ করে। যদি পশ্চিমা শক্তি ও ইসলামিস্টরা পরস্পরকে ফলপ্রসূভাবে সহযোগিতা করে, তবে একে অন্যের সাথে কথা বলা এবং একে অন্যের সাথে কাজ এখনই শুরু করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে রাজনৈতিক বক্তব্যের ওপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার বিশেষ প্রভাব ছিল। এর পরে মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিকীকরণের নতুন বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় আসে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামপন্থীদের বিপরীতে কিছু ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলকে বিকল্প হিসেবে চাপিয়ে দেয়। অবশ্য মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় আসার ভয় সত্ত্বেও পর পর কয়েকটি মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামপন্থী বিরোধী দলের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে।
‘৯/১১’-এর পরে মধ্যপ্রাচ্যের গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রশ্নটি আরো জরুরি হয়ে ওঠে। বুশ প্রশাসন এ অঞ্চলে গণতন্ত্রের অভাব এবং সন্ত্রাসের উত্থানের মধ্যে একটি কার্যকর সংযোগ থাকার কথা বলে। তবে এটি তিক্ত হলেও সত্য, আমেরিকার বেশির ভাগ গ্রুপ বিভিন্ন আগ্রাসী শত্রুর সাথে তাল মিলিয়ে চললেও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের এমন গ্রুপগুলোর সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ উন্মুক্ত করেনি, যারা দীর্ঘ দিন ধরে অহিংস এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। ইইউ-স্তরের অংশীদারিত্বের জন্য কাঠামোর অভাব এবং ইসলামপন্থী ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনগুলোকে জড়িত করার জন্য কাঠামোগত ব্যর্থতার কারণে বেশির ভাগ ইউরোপীয় অংশীদারিত্ব অ্যাডহক দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংলাপ নিজেই কোনো লক্ষ্য নয়, বরং এটি কৌশলগত অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছার একটি উপায় হতে পারে।
ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের গবেষকদের মতে, ইসলামিস্টদের সাথে পাশ্চাত্যের সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তিন স্তরের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। এ তিনটি স্তর হলো নিম্নস্তরের যোগাযোগ, কৌশলগত সংলাপ এবং অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা। তথ্য সংগ্রহের জন্য কূটনীতি প্রথম ধরনের যোগাযোগ হতে পারে। তবে গণতন্ত্র ও সুরক্ষার প্রশ্ন এলে কৌশলগত সংলাপ বা অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। কৌশলগত সংলাপে উভয় পক্ষের অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক, যাতে তারা নির্দিষ্ট এলাকায় একে অন্যেকে সহায়তা করতে পারে। অংশীদারিত্ব সক্রিয় রাজনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে আরো আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা তথা উচ্চতর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বা রাষ্ট্রদূত বা মন্ত্রী পর্যায়ে হতে পারে।
আগামী কয়েক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ রাজনৈতিক ইসলামকে যুক্ত করার কৌশলগুলোর ক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের গণতন্ত্রকে সমর্থন করার ব্যাপারে এখন অনেকখানি অনিচ্ছুক। ওয়াশিংটনের নীতিপ্রণেতাদের মধ্যে যারা নানা ধরনের স্বার্থ সহায়ক হিসেবে স্বৈরাচারী সিস্টেমকে দেখে থাকেন, তারা গণতান্ত্রিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি ‘বীমা নীতি’ অনুসরণ করার উপায় হিসেবে ইসলামপন্থীদের দেখতে পারেন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ অহিংস ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গোষ্ঠীগুলোর একটি সাধারণ লাইন তৈরির কাজ শুরু করতে পারে। এর অর্থ কেবল প্রাথমিকভাবে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক জীবনে শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নেয়ার অধিকার এবং ইসলামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরো ধারাবাহিকভাবে নিন্দা করার নীতিগত সমর্থন হতে পারে। উপরন্তু তারা তাদের বিদ্যমান মিডল ইস্ট প্রোগ্রামে ইসলামী রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। সেখান থেকেই স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন সরকার অভ্যন্তরীণ বিষয়, আঞ্চলিক স্বার্থ এবং কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, আমেরিকান নীতিনির্ধারণে এর কতটা প্রভাব এখনকার পরিস্থিতিতে পড়বে, যেখানে লিবিয়ায় ওয়ার লর্ড জেনারেল হাফতারের সামরিক অভিযান চলছে, সুদানে গণতন্ত্রকামীদের ওপর সেনা জান্তার নির্মম দমন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে আর গণতান্ত্রিক সংস্কারকামী সরকারগুলোর ওপর আঞ্চলিক একনায়কদের প্রচণ্ড চাপ অব্যাহত রয়েছে। সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসন যত দিন হোয়াইট হাউজে রয়েছে, তত দিন প্রতিকারমূলক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাস্তবতা এবং সাধারণ বুদ্ধিশুদ্ধি মার্কিন বিদেশ নীতি বলয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বিরল বিষয় বলে মনে হচ্ছে। তবে তার টাকার জন্য কৌশলগত স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার অনেক কার্যক্রমে আমেরিকান ডিপ স্টেটের নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা থাকতে পারে। আর পরের নির্বাচনে মার্কিন প্রশাসনে পরিবর্তন এলে যে মাত্রায় হোক না কেন, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। তা না হলে মর্ফির আইনটি পশ্চিমা পরাশক্তির জন্য প্রযোজ্য হবে ‘ভুলের ওপর ভিত্তি করে আবারো ভুলের দিকেই যাত্রা হবে’।