স্বদেশ ডেস্ক: সারাবিশ্বে বধিরতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতার মধ্যে বধিরতার অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্বের ৪৬৬ মিলিয়ন মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত। এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না যায় তা হলে ২০৫০ সালে ৯০০ মিলিয়ন মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত হবে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের ১ জন বধির হয়ে যাবে। বাংলাদেশে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বধিরতার সমস্যায় ভুগছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের হামিদুর সিনহা লাউঞ্জে ‘সার্ক অঞ্চলের বধিরতা প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সার্ক অটোল্যারিংগোলজিস্টস অ্যাসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নাসিমা আখতার। তিনি জানান, বর্তমান বিশ্বের ৫ শতাংশ মানুষ বধিরতায় ভুগছেন। বাংলাদেশে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ জনগণ বধিরতায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণ বধির। ১৫ বছরের নিচে বধিরতায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ৬ শতাংশ। চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সমস্যা নিরাময়যোগ্য। দ্রুত শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত ও কানের শোনার ব্যবস্থা করতে পারলে এসব শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসা সম্ভব।
আশার কথা হলো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বধিরতা নিরূপণ ও প্রতিরোধের বিষয়টি প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় নীতি ও কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। বধিরতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা চালু, জনসচেতনতা সৃষ্টি, জনবল তৈরি, বধিরতা অতিদ্রুত নিরূপণ কর্মকৌশলে ইত্যাদি গুরুত্ব পেয়েছে। শব্দদূষণ, অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার, একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে কথা বলা, জন্মগত ক্রটি কানের সংক্রমণ বধিরতার অন্যতম কারণ। তিনি আরও জানান, ঢাকা শহরে শব্দদূষণের মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি।
শব্দদূষণের কারণে বধিরতার মধ্যে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত হয়। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারও বধিরতার অন্যতম একটি কারণ। মোবাইলে উচ্চস্বরে গান শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। লাউডস্পিকারে বেশিক্ষণ গান শুনলে কানে শোনার সক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। বধিরতা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচিও গুরুত্বপূর্ণ।
হাম, মামস, রুবেলা ও মেনিনজাইটিসের টিকা প্রদানের মাধ্যমে ১৯ শতাংশ শিশুর বধিরতা প্রতিরোধ করা যায়। কানে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণও একটি জরুরি বিষয়। বর্তমান সময়ে ৫ বছরের নিচের বয়সী বধিরতা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হিয়ারিংএইড স্থাপন জরুরি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন, বধিরতা প্রতিরোধে আগে ভাগেই শনাক্ত ও দ্রুত চিকিৎসার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, একজন মানুষ কানে শুনতে না পেলে সে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় এবং একটি শিশু মূল স্রোত ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই বধিরতার বিষয়টি অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের বিষয়ে তাদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি। সচেতনতার পাশাপাশি মোটিভেশনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সার্ক অটোল্যারিংগোলজিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বাংলাদেশ চাপ্টার) সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এসএম খোরশেদ আলম মজুমদার, অধ্যাপক এএইচএম জহুরুল হক সাচ্চু, অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির, অধ্যাপক ডা. এসকে নূরুল ফাত্তাহ রুমী, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. মো. আবু হানিফ, ডা. মোহাম্মদ ইদ্রিছ আলী, ডা. দেওয়ান মাহমুদ হাসানসহ বিদেশি অনেক চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।