সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

বিদেশের শ্রমবাজারে দুর্দিন….

বিদেশের শ্রমবাজারে দুর্দিন….

স্বদেশ ডেস্ক: বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের দুর্দিন চলছে। দিনে দিনে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ। নানা কারণে ফেরত আসার সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বেসরকারি হিসাব বলছে, ক’বছর ধরে গড়ে ৫০ হাজার (বছর প্রতি) বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন। কিন্তু এবারের পূর্বাভাস ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ২০১৯ সালে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত এসেছেন ৩৭ হাজারের বেশি। কিন্তু চলতি মাসেই মালয়েশিয়া থেকে ফিরছেন ২৯ হাজার।
দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে-বিভিন্ন কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া ৩২ হাজার বাংলাদেশি মাহাথির সরকার ঘোষিত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় বাধাহীনভাবে দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেছেন। সে হিসাবে এখনও প্রক্রিয়াধীন আছেন আরও ৩ হাজার।
আগামী ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদের সূযোগটি কাজে লাগাতে হবে এবং দেশে ফিরতে হবে। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসানের মতে, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা অতীদের রেকর্ড ভাঙ্গবে কি-না? তা নিয়ে সংশয় থাকলেও সংখ্যাটা যে বড় হবে তাকে কোন সন্দেহ নেই। তার যুক্তি হচ্ছে-মালয়েশিয়া থেকে যে ২৯ বা ৩২ হাজার ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন ফ্লাইট সঙ্কটের কারণে বিশাল সংখ্যক ওই বাংলাদেশি এক সঙ্গে ফিরতে পারবেন না। ফলে বছর শেষ না হলে প্রকৃত সংখ্যা নিরূপন করা যাচ্ছে না। শরিফুলের মতে, কত লোক বিদেশে যায় তার হিসাব থাকলেও কতজন ফিরেন-তার কোন সরকারি তথ্য নেই। যেহেতু তারা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হয়ে আসেন, তাই তাদের সংখাটা হিসাব করা খুব কঠিন কিছু নয় বলে মনে করেন তিনি। ব্র্যাকের হিসাবে মতে, বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৮ সালে ফিরেছেন প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি। বৈধ ডকুমেন্ট না থাকায় তাদের ট্রাভেল পাস নিয়ে ফিরতে হয়েছে। গত কয়েক বছরে দু’লাখের বেশি শ্রমিক ফেরত এসেছে জানিয়ে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে নিয়মিতভাবে শ্রমিক ফিরছেন। আনডকুমেন্টেড প্রচুর বাংলাদেশিকে ইউরোপের দেশগুলোও ফেরত পাঠাচ্ছে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার নারীকর্মী দেশে ফিরছেন। কাজ পছন্দ না হওয়া এবং সার্বিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরে গেছেন আরও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। তবে সব ফেরার কারণ নির্যাতন নয়। একইভাবে কাতার, জর্ডানসহ কয়েকটি দেশ থেকেও নারী কর্মীদের ফেরার ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরছেন ২৯ হাজার বাংলাদেশি: এদিকে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- মালয়েশিয়া সরকার ঘোষিত অবৈধ বিদেশিদের ঘরে ফেরা কর্মসুচি ‘ব্যাক ফর গুড’-এর আওতায় সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার বাংলাদেশী সাধারণ ক্ষমার সুবিধা নিয়েছে। তাদের একটি অংশ দেশে ফিরেছেন, বেশিরভাগই ঢাকার ফ্লাইট ধরার অপেক্ষায়। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতো ইনদিরা খায়রুল জাইমি দাউদের সঙ্গে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। নানা কারণে দেশটিতে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া মোট ৩২ হাজার বাংলাদেশি ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসুচির সুবিধায় দেশে ফিরতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন জানিয়ে বলা হয়-ইমিগ্রেশন মহাপরিচালকের সঙ্গে হাই কমিশনারের ঘন্টাব্যাপি বৈঠকে অবৈধ বাংলাদশিদের দেশে ফেরানোর কর্মসূচি ছাড়াও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। নব প্রতিষ্ঠিত মাহাথির সরকার প্রবর্তিত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসুচিতে বাংলাদেশের কর্মীদের ব্যাপক সাড়া প্রদানকে উৎসাহব্যঞ্জক উল্লেখ করে দেশটির ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক আশা করেন-বাংলাদেশিসহ অন্যান্য যে সব দেশের কর্মীরা অবৈধ অবস্থায় রয়েছেন তারা মালয়েশিয়া সরকারের এ সুযোগ গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি ঘোষণার পূর্বে দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসীদেরকে জেল, জরিমানা ও বিভিন্ন ধরনের আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হতো, যা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। বাংলাদেশ মিশনের বার্তা মতে, ইমিগ্রেশন মহাপরিচালকের সঙ্গে হাইকমিশনার মিস্টার ইসলামের দীর্ঘ বৈঠকে ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের আইনী প্রক্রিয়ায় দ্রুত মুক্তি, ছাত্র, প্রফেশনাল ও শ্রমিকদের ভিসা রিনিউ সহজীকরণ এবং কুয়ালালামপুরস্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশিদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। বিভিন্ন কারণে ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশিদের আশু মুক্তির ব্যবস্থা করতে মহাপরিচালককে অনুরোধ করেন হাই কমিশনার। জবাবে মহাপরিচালক দাতো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। আলোচনাকালে হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, কাউন্সেলর (শ্রম ২) মো. হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল এবং প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) রুহুল আমিন এবং মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের পলিসি এবং স্ট্র্যাটেজি পরিচালক মোহাম্মদ জুহাইরি মাত রাডি, পাসপোর্ট বিভাগ, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ডিপার্টমেন্ট, অপারেসি ও ইনভেস্টিগেশন এবং ফরেন এফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ দূত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের সাধারন ক্ষমায় দেশে ফেরার সুযোগ দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একই দিন (দিনে দিনেই) হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হচ্ছে এবং ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য হাইকমিশনের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম নিরলসভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ দূতসহ বিদেশিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বুথের কার্যক্রম সাধারণ কর্মদিবসে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পুত্রজায়া, কুয়ালালামপুর, সেরেমবান, শাহ আলম এবং জহুর বারু ইমিগ্রেশনে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট থেকে ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877