স্বদেশ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নোটিফিকেশন স্থগিত করেছে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসা। সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ১৯ শে আগস্ট নোটিফিকেশন জারি করে ইমরান খানের সরকার। কিন্তু তার এই নোটিফিকেশন আগামীকাল বুধবার আদালতে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ওই বিচারপতি। দ্য জুরিস্টস ফাউন্ডেশনের এক আবেদনের শুনানিতে তিনি আজ মঙ্গলবার এমন সিদ্ধান্ত দেন। প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সেনাপ্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি অনুমোদন যথার্থ (কারেক্ট) নয়। এর প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সরকার ও জেনারেল বাজওয়াকে নোটিশ দিয়েছেন আদালত। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন-এর অনলাইন সংস্করণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৯ শে নভেম্বর শুক্রবার অবসরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া। কিন্তু তার আগেই ১৯ শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার ক্ষমতার মেয়াদ আরো তিন বছরের জন্য বর্ধিত করে তা অনুমোদন করেন। এ বিষয়ে তখন প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে একটি সংক্ষিপ্ত নোটিফিকেশন ইস্যু করা হয়। তাতে বলা হয়, বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করার তারিখ থেকে নতুন মেয়াদে আরো তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়াকে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে পিটিশন দাখিল করে দ্য জুরিস্ট ফাউন্ডেশন। এই আবেদন প্রত্যাহারের অন্য একটি আবেদন আমলে নেন প্রধান বিচারপতি। তবে তিনি পিটিশন প্রত্যাহারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮৪(৩) ধারার অধীনে বিষয়টিকে জনস্বার্থে বিবেচনায় নিয়েছেন। এই মামলাটিকে এখন সুয়েমোটো নোটিশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ১৯ শে আগস্টের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন সংক্রান্ত নোটিফিসেশনের উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রাখেন- যদি ১৯ শে আগস্টই নোটিফিকেশন ইস্যু করা হয়ে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী ২১ শে আগস্ট কিসের অনুমোদন দিয়েছেন? এ সময় এটর্নি জেনারেল আনোয়ার মানসুর খান বলেন, এই নোটিফিকেশনে মন্ত্রীপরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। তাই মন্ত্রীপরিষদের অনুমোদনের পর নোটিফিসেশনে স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, মন্ত্রীপরিষদের অনুমোদনের পরে কি ওই নোটিফিকেশনে আবার প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দিয়েছেন? তার এ প্রশ্নের নেতিবাচক জবাব দেন এটর্নি জেনারেল মানসুর খান। এ সময় শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেনাপ্রধানের মেয়াদ শুধু বাড়াতে পারেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তার জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা আবার প্রেসিডেন্টের অনুমোদন নিতে পারি।
পাকিস্তানের সংবাদ পত্রিকা ডন লিখেছে, এটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর বিচারপতি খোসা বলেন, মন্ত্রীপরিষদের ২৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১১ জন সেনাপ্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধিতে অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীপরিষদের ১৪ জন কোনোই মতামত দেন নি। তাদের এই নীরবতাকে কি সরকার একটি এগ্রিমেন্ট বা একমত হওয়া হিসেবে নিয়েছে? প্রধান বিচারপতির এমন প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, যারা এই নোটিফিকেশনে ‘হ্যাঁ‘ বলেন নি, তারা আসলে এ প্রস্তাবে ভোটে অংশ নেন নি। পাল্টা প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানতে চান, এসব সদস্যকে সময় দেয়ার কথা কি ভেবেছে মন্ত্রীপরিষদ? কারণ, এখন পর্যন্ত মন্ত্রীপরিষদের ১৪ জন সদস্য সেনা প্রধানের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ‘হ্যাঁ‘ বলেন নি। তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হচ্ছে। এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি মানসুর আলী শাহ। তিনি জানতে চান, মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে চিন্তাভাবনার জন্য মন্ত্রিপরিষদকে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছিল কিনা। মেয়াদ বাড়ানোর কারণ নিয়ে মন্ত্রীপরিষদে কোনো বিতর্কও হয় নি।
মৌখিক এক নির্দেশে আদালত বলেন, নিজস্ব ক্ষমতা ব্যবহার করে ১৯ শে আগস্ট জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে নোটিফিকেশন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নোটিফিকেশন দেয়ার পর ভুল বুঝতে পেরেছেন (তিনি)। ফলে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সামারি পাঠিয়ে দেন প্রেসিডেন্টের কাছে। পরে ১৯ শে আগস্ট তাতে অনুমোদন দেন প্রেসিডেন্ট। আদালতকে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির আলোকে সেনাপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর, শুধু একজন অফিসারের দায়িত্ব নয়। যদি আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিই কারণ হিসেবে দেখা হয় তাহলে প্রতিজন সেনা কর্মকর্তাকে নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে। মেয়াদ বৃদ্ধি বা নতুন নিয়োগের বিষয়ে কোনো যৌক্তিক কারণ দিতে পারেন নি এটর্নি জেনারেল।