সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

আপাতত পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পিছটান

আপাতত পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পিছটান

স্বদেশ ডেস্ক:

আপতত পিছু হটেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। গতকাল থেকে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, আগের তুলনায় পরিবহন চালক-শ্রমিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। গতকাল শুক্রবার চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের মাত্র কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে প্রাণ গেছে ১২ জনের। পরিবহন সেক্টর নিয়ে কাজ করেন, এমন কয়েকজন বলেছেন, সরকার একটু সময় দিয়েছে। আসলে মালিক-শ্রমিকদের কোনো দাবিই মেনে নেয়া ঠিক হবে না।

সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও বিআরটিএ যখন মাঠে নামে ঠিক তখন থেকেই বাস-মিনিবাস চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীসহ সারা দেশেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে আন্তঃজেলা এবং ঢাকার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস মালিক-শ্রমিকরা গাড়ি চালানো বন্ধ রাখে। এমনকি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দাবিও উত্থাপন করেনি। গত মঙ্গলবার থেকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে দেশের মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এরই মধ্যে গত বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তুম আলী খান এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে সংশোধনের জন্য ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। বুধবার তাদের ধর্মঘট পালিত হয়। বুধবার রাতে তারা ৯ দফা দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসেন। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক পরিবহন আইন শিথিল করার আশ্বাস দিলে পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে পণ্য পরিবহন চলাচল শুরু হয়; কিন্তু এরপরেও অঘোষিত ধর্মঘট চালিয়ে যেতে থাকে বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামাও করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক। এ সময় বাস মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ধর্মঘট কারা করছে তা জানা নেই তাদের।

ধর্মঘটের সাথে তাদের কোনোই সম্পৃক্ততা নেই। হঠাৎ করেই গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দেখা যায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বাস-মিনিবাস চলছে ঠিকমতো। তবে গতকাল পরিবহন শ্রমিকরা আগের চেয়েও বেপরোয়া ছিল। তাদের এই বেপরোয়া গতির কারণে অন্তত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন সড়কে। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে সকাল ৯টার দিকে নিমতলা এলাকায় বসুমতি পরিবহনের একটি বাস একটি মোটরসাইকেল আরোহী দুইজনকে চাপা দিয়ে পাশে ছিটকে পড়ে। এতে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা ঘটনাস্থলেই নিহত হন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। দুপুরের দিকে একটি বেপরোয়া বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন প্রাণ হারায়। আশরাফ আলী নামের মাওয়াগামী এক যাত্রী গতকাল বলেছেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি যাত্রাবাড়ী যান। যাত্রাবাড়ী কাউন্টারে গেলে ইলিশ পরিবহনের বাসের কথা বলে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা একটি গাড়িতে যাত্রী তোলা হয়। টিকিট কাটার পরে যাত্রীরা জানতে পারেন ওটি ইলিশ পরিবহনের কোনো বাস নয়। থেমে থেমে এই গাড়িটি মাওয়া যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় নষ্ট করে। এ সময় যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে ওই গাড়ির হেলপার-সুপারভাইজার যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।

মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগের সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেছেন, ধর্মঘটকারীরা পিছু হটেছে। তিনি বলেছেন, আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত সরকার সময় দিয়েছে। এরমধ্যে কাগজপত্র ঠিক করতে হবে। এই সময় পর্যন্ত আইন শিথিল থাকবে। সরকার ভালো করেছে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করাতে পেরেছে।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে নয়া দিগন্তকে বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সরকারের নতি স্বীকার করা ঠিক হবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনৈতিক দাবি মেনে নেয়া উচিত হবে না।

এ দিকে, গতকাল যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সকালের দিকে যাত্রী ছিল কম। টার্মিনালে গিয়ে বাস পাবেন কি না সেই সন্দেহে সকালে অনেকেই টার্মিনালে যাননি। তবে দুপুরের পর থেকে টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিলো উপচে পড়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877