শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল : মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও রইলো না ভিক্ষুক মনোয়ারার

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল : মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও রইলো না ভিক্ষুক মনোয়ারার

স্বদেশ ডেস্ক:

পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। একটি ছেলে থেকেও নেই। সংসারে শুধু আছে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে ফরিদা বেগম। ফরিদাকে নিয়েই তার সংসার। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করে জীবন চলে এ বৃদ্ধার। থাকতেন স্বামীর রেখে যাওয়া খড়খুটোর ছোট্ট একটি ঘরে।

এভাবে দীর্ঘদিন জীবন-যাপন করে আসছিলেন মনোয়ারা। কিন্তু ঘূর্ণিঝর বুলবুল তার অভাবের এই সংসারটিকেও ভেঙে চুরমার করে দিল। গত শনিবার ভোর রাতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হানায় মনোয়ারার ঝুপড়িঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে যান বৃদ্ধা মনোয়ারা ও প্রতিবন্ধী ফরিদা। ঘরটি হারিয়ে যাওয়ায় এখন তাদের মাথাগোঁজার জায়গাটুকুও নেই।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর থেকে প্রায় একসপ্তাহ সময় অতিবাহিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি কোনোপ্রকার ত্রাণ সহায়তা।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের স্বামী শামসুল হক বয়াতী ছিলেন একজন কৃষক। ১০ থেকে ১২ বছর আগে মারা যান তিনি। শামসুল হক বয়াতীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে নাসির বয়াতী কিছুদিন সংসারের হাল ধরেছিল। অভাব-অনোটনের মধ্যে কয়েক বছর মা ও বোনকে নিয়ে সংসার চালায় নাসির। এর পর গত ৫ বছর আগে হঠাৎ করে সংসার ফেলে ঢাকা চলে যায় নাসির।

এদিকে, ছেলে চলে যাওয়ার পর মা মনোয়ারা অসহায় হয়ে পড়েন। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে ফরিদাকে নিয়ে নতুন করে শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। অন্যের বাড়িতে ভিক্ষা করে কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বসবাস করছেন স্বামীর রেখে যাওয়া খড়কুটোর ছোট্ট একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। শত কষ্ট থাকলেও অন্তত মাথা গোঁজার ঠাই ছিল তাদের। কিন্তু গত ৯ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কেড়ে নেয় মনোয়ারা বেগমের খড়কুটোর সেই ঘরটি।

ঘর হারিয়ে এখন পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মনোয়ারা। গত ৫-৬ দিন যাবৎ সেখানেই কোনোভাবে আছেন। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে কোনোপ্রকার ত্রাণও পাননি এই বৃদ্ধা। আগামী দিনে কোথায় থাকবেন, কি খাবেন এনিয়ে চিন্তিত তিনি। এভাবেই অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন মনোয়ারা বেগম ও তার প্রতিবন্ধী মেয়ে ফরিদা বেগম।

মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাবা এ্যাকে এ্যাকে সব আরাইলাম। সব আরাইবার পর ভিক্ষা কইরা নাবুঝ মাইডারে লইয়া খাইছি। আর ভাঙ্গা ঘরে থাকছি। বইন্নায় (বন্যা) হেই ভাঙ্গা ঘরডাও লইয়া গ্যাছে। এ্যাহন আমাগো মাথা রাহার যায়গাডাও নাই। এ্যাত বড় বইন্নাডা গ্যাল কেউ আমাগো খবর লইতে আইলোনা। সাহায্যতো পরের কতা, বইন্নায় আমরা আছি না মরছি কেউ দ্যাখতেও আয় নাই।’

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাশফাকুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি আসলেই কষ্টের। আমরা খোঁজ নিয়ে অতিশিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877