সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রকৃষ্ট কিছু উদাহরণ

ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রকৃষ্ট কিছু উদাহরণ

স্বদেশ ডেস্ক:

পবিত্র কুরআনের শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের প্রকৃত উদাহরণ হলো রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনাদর্শ। রাসূলুল্লাহ সা:-এর ইন্তেকালের পর যখন আয়েশা রা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি কেমন ছিলেন তখন প্রতি উত্তরে উম্মুল মুমিনিন বলেছিলেন, তোমরা কি কুরআন পড়ো না? সুতরাং রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন হলো তাত্ত্বিক কুরআনের প্রায়োগিক রূপ। সহিষ্ণুতার ইতিহাসে তিনি হলেন তুলনাহীন। মক্কার কুরাইশ কর্তৃক চরম নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সা: তাদের জন্য বদদোয়া পর্যন্ত করেননি। শুধু তাই নয়, মক্কা বিজয়ের পরে যখন প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এলো তখন তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিজের ও ধর্মের উচ্চাঙ্গতা, মহত্ব প্রকাশ করলেন। সহিষ্ণুতার উদাহরণে তাঁর জীবন ছিল ভরপুর।

হিলফ-উল-ফুযুল : ১৫ বছর বয়সে যখন কুরাইশদের পক্ষ হয়ে রাসূলুল্লাহ সা: ‘ফিজারের’ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন তখনো তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেননি। হয়তো কিছু তীর কুড়িয়ে দিয়েছিলেন চাচাদের হাতে। কিন্তু যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে যে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়েছিল তাঁর কোমল হৃদয়ে; তার ফল হিসেবে বিশ্ব পেয়েছিল সহিষ্ণুতা অর্জনের মূল উপায়। গঠিত হলো ‘হিলফ-উল-ফুযুল’। পক্ষ-প্রতিপক্ষ যুদ্ধ বন্ধে একাত্মতা ঘোষণা করল; প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আর অন্যায়, অবিচার, অসহিষ্ণুতা বন্ধে জীবন ব্যয়ের। ফলে সে সমাজে শান্তির ধারা সূচনা হলো।

মদিনা সনদ : মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের পরে মদিনার সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলুল্লাহ সা: তৈরি করলেন গঠনতন্ত্র। সেখানে ৪৭টি ধারার প্রতিটিতেই সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে সহিষ্ণুতার। ধর্ম-বর্ণ, জাতিগোষ্ঠী সব কিছুকে ভুলে প্রাধান্য পেয়েছে সামাজিকতা ও মানবতা। বিশৃঙ্খলিত ও অশান্ত এ সমাজব্যবস্থায় স্বাধীনতা পেল সর্বস্তরের মানুষ। মানবিকতার জয়গানে তাই ফুটে উঠল ইসলামের উদারতা, সৌন্দর্য, মহত্ব। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সেখানে শান্তিই প্রতিষ্ঠা পেল না, বরং ইসলামের প্রচার-প্রসার হলো দুনিয়াজুড়ে, সংখ্যাধিক্যতা পেল মুসলিমের। এসবের পেছনের কারণ হিসেবে অন্যান্য বিষয়ের সাথে অপরের প্রতি সহিষ্ণু মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা সর্বতোভাবে ইতিহাস স্বীকৃত।

ধর্মীয় যুদ্ধসমূহ : রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর অংশগ্রহণে যত যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছিল, তাতে মুসলিম পক্ষ আগে আক্রমণ করেছে তার কোনো প্রমাণ ইতিহাস দিতে ব্যর্থ। আমরা দেখেছি কিভাবে মুশরিকরা যুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে ইসলামকে শেষ করার নিমিত্তে মুসলিমদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। প্রতি উত্তরে রাসূল সা:-এর আত্মরক্ষামূলক আচরণের ফলে শত্রুরা মিত্রে পরিণত হয়েছে, হেদায়েতের ছায়াতলে শামিল হয়েছে অগণিত মানুষ।

হুদায়বিয়ার সন্ধি : হুদায়বিয়ার সন্ধিকে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে এ সন্ধির ধারাগুলোর প্রতি লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, তা ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য অপমানজনক, লজ্জাকর এবং পরাজয়ও বটে। কিন্তু এ সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধকে এড়িয়ে শান্তির জন্য চুক্তি করে সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। ফলে মাত্র দুই বছর পরে অষ্টম হিজরিতে ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা বিজয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা:। অথচ এই সন্ধির আগে মুসলিমরা ওসমান রা:-কে হত্যার (গুজব) প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাতে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর হাতও (সম্মতি) সেখানে ছিল। সুতরাং যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত একটা বাহিনী কিভাবে সহিষ্ণু হয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন বিশ্ববিবেকের কাছে। এই সহিষ্ণুতার ফলও তাই কাক্সিক্ষত মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে এসেছিল।

বিদায় হজের ভাষণ : বিশ্বমানবতার ইতিহাসে মানবিকতা ও মানবাধিকারের বিচারে রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিদায় হজের ভাষণ ভবিষ্যৎ ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ ভাষণে মানুষের সমমর্যাদা ও সমাধিকারকে। প্রাচীন আরব সংস্কৃতি, কুপ্রথাকে ছুড়ে ফেলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইসলামের সুমহান আদর্শকে। যেখানে- জাতি-বর্ণ, গোত্র, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আরব-অনারব, পুরুষ-নারী সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান পেয়েছে মানবতা ও তার তাকওয়া। সামাজিকতায় যেমন কোনো কিছুই বঞ্চনার কারণ নয়, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিতে আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার উপায় হিসেবে সব কিছুকে উপেক্ষা করে ঘোষণা করা হয়েছে তাকওয়াকে।

এ রকম হাজারো উদাহরণ আমরা রাসূল সা:-এর জীবনে পাই। এসব মানবিক ও মহত্বের উদাহরণের আধার বলেই তিনি সারা বিশ্বের জন্য ‘রহমাতুললিল আলামিন’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৭); কাল, পাত্র, যুগ-পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে সবার জন্য আদর্শ, অনুকরণীয়। (সূরা আল-আহযাব : ২১)। সুতরাং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল সা:-এর এ আদর্শকে বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয়।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877