স্বদেশ ডেস্ক: ‘এত জোরে ধাক্কা খায় যে, মনে হয়েছিল ট্রেন ১০ হাত ওপরে উঠে গেছে। আমার শরীর এক ধাক্কায় ওপরে উঠে নিচে আসনের ওপর আছড়ে পড়ে। ভেবেছিলাম কেউ বোমা মেরেছে।’ —দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেসের যাত্রী কাওসার দুর্ঘটনার ওই মুহূর্তের বর্ণনা এভাবেই দিলেন। তিনি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর পাজরের হাড় ভেঙে গেছে। পায়েও আঘাত পেয়েছেন।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২ টা ৪৮ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রথম আলোকে দেওয়া কাওসারের (২৮) ভাষ্য, তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জের সদর উপজেলার উত্তর শ্যামলী গ্রামে। পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক। চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল সোমবার রাতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে তিনি উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনের ‘জ’ বগির ৫০ নম্বর আসনের যাত্রী ছিলেন তিনি।
কাওসার বলেন, ‘ট্রেনটি মন্দভাগ রেল স্টেশনে এলাকায় আসা মাত্র সজোরে ধাক্কা খায়। তখন ভেবেছিলাম, কেউ বোমা মেরেছে! মনে হয়েছিল ট্রেনটি ১০ হাত ওপরে উঠে গিয়ে নিচে পড়েছে। আমার শরীর ওপরে উঠে গিয়ে নিচে আসনের ওপর আছড়ে পড়ে। উদ্ধারকারীরা আসার পর আমার পাশে পড়ে থাকা তিন বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর লাশ তাঁদের হাতে তুলে দিই। পরে আমাকে উদ্ধার করা হয়। তখনই আমি জ্ঞান হারাই।’
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার তিরাশি গ্রামের জাহাঙ্গীর মাল (৪০)। পেশায় মৎস্যজীবী। তাঁর ভাষ্য, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন। মাজার জিয়ারত করতে সিলেট গিয়েছিলেন। তাঁর বাম পা ভেঙে গেছে।
মৌলভীবাজার হেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বুনো বীর গ্রামের আবদুস সোবহান (৪০) মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তিনিও ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। পেশায় তিনি কৃষি শ্রমিক।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ১৩ জনকে আনা হয়। এর মধ্যে সাড়ে আট বছরের একটি মেয়ে শিশুকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিল না। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি নয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।